‘টিংকারম্যান’ থেকে চ্যাম্পিয়ন রানিয়েরি

লেস্টার সিটির দায়িত্ব নেওয়ার আগে ১৫টি দলের কোচ ছিলেন ক্লাওদিও রানিয়েরি। ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে পাঁচ বার হয়েছেন বরখাস্ত, চেলসির কোচ থাকার সময় দল ও ফরমেশনে বারবার পরিবর্তন আনায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম তার নাম দিয়েছিল ‘টিংকারম্যান’। সমালোচনার তিরবিদ্ধ সেই রানিয়েরিই আজ ইতিহাসের পাতায়, চ্যাম্পিয়নের মর্যাদায়।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2016, 05:33 PM
Updated : 3 May 2016, 05:40 PM

ক্লাবের ১৩২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জেতা লেস্টারের কোচ রানিয়েরি আজ অনেকের কাছেই কিংবদন্তিতুল্য।

বিভিন্ন দল থেকে বাদ পড়া খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া একটা দল, যাদের নিয়ে মৌসুম শুরুর আগে কেউ কোনো সম্ভাবনাই দেখেনি। অবনমন এড়ানোই ছিল যাদের প্রাথমিক লক্ষ্য, শিরোপা লড়াইয়ে যাদের শিরোপা জেতা নিয়ে বাজির দর ছিল ৫০০০:১, সেই ‘পুঁচকে’ দলটিই আজ চ্যাম্পিয়ন। যে রূপকথার কারিগর এই রানিয়েরি।

মৌসুমের শুরুতে লেস্টারকে কেউ শিরোপা লড়াইয়ে দাবিদার বললে নিশ্চয় তিনি হাসির পাত্র হতেন। গত জুলাইয়ে লেস্টারের রানিয়েরিকে কোচ হিসেবে নিয়োগ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন সাবেক ফুটবলার ও ফুটবল বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।

লেস্টারের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা গ্যারি লিনেকার কোচ হিসেবে রানিয়েরিকে নিয়োগ দেওয়ার প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “ক্লাওদিও রানিয়েরি পরিষ্কারভাবেই অভিজ্ঞ, কিন্তু লেস্টারের জন্য এটা ভালো পছন্দ নয়।”

২০১৪ সালের বিশ্বকাপ শেষে দুই বছরের চুক্তিতে গ্রিস জাতীয় দলের কোচ হিসেবে যোগ দেন রানিয়েরি। কিন্তু দলের টানা ব্যর্থতার মাঝে ওই বছরেরই ১৫ নভেম্বর ইউরো বাছাইপর্বে দুর্বল ফারো আইল্যান্ডের কাছে দল হেরে যাওয়ায় তাকে বহিষ্কার করে গ্রিস কর্তৃপক্ষ।

বহিষ্কারের পর গ্রিস ফুটবলের প্রধান জিওর্গোস সারিস রানিয়েরিকে নিয়োগ দেওয়ার ভুল সিদ্ধান্তের জন্যে ক্ষমা চান। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, “কোচ পছন্দে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক সিদ্ধান্তের পুরো দায় আমি নিচ্ছি, যার ফলে সমর্থকদের সামনে জাতীয় দলের ভাবমূর্তি এতটা খারাপ হয়েছে।”

সেই রানিয়েরিই আজ চ্যাম্পিয়ন। এক বছর আগে তার বিরোধিতা করা লিনেকার তাই গত মার্চে ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানে লিখেছিলেন, “কতটাই না ভুল ছিলাম আমি।”

একাদশে রদবদল ও খেলার ফরমেশনে বারবার পরিবর্তন আনার কারণে যার নাম পড়ে গিয়েছিল ‘টিঙ্কারম্যান’, সেই রানিয়েরিই মৌসুমের শুরু থেকেই ধরা দিলেন পুরো নতুন রূপে। ইপিএলের শিরোপা প্রত্যাশী দলগুলোর তুলনায় লেস্টারই তাদের প্রথম একাদশে সবচেয়ে কম পরিবর্তন এনেছে। আর পুরোটা মৌসুম জুড়েই রানিয়েরি তার দলকে খেলিয়েছেন ৪-৪-২ ফরম্যাটে। যেখানে পরাশক্তি দলগুলোর অধিকাংশই খেলে থাকে ৪-৩-৩ ফরম্যাটে।

গড়পড়তা মানের একটা দলকে আমূল বদলে দেওয়ার পুরো কৃতিত্বটাই তাই রানিয়েরিকে দেন লিনেকার।  

“এমন সব খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া একটা দল যারা এক বছর আগে ভালোবাসা কিংবা টাকার জন্যেও একটা ম্যাচ জিততে পারতো না, তারাই অপ্রতিরোধ্য এক শক্তি হয়ে উঠেছে। জ্ঞানী, অনুপ্রেরণাদায়ী- হ্যা, অনুপ্রেরণাদায়ী- টিঙ্কারম্যান তাদের সবাইকে সুন্দরভাবে একতাবদ্ধ করেছে।”

তিন দশকের ক্যারিয়ারে প্রথম কোনো লিগ শিরোপা জেতা রানিয়েরি জানান, বারবার হতাশ হতে হলেও কখনোই আত্মবিশ্বাস হারাননি তিনি।

“আমি সব সময়ই ভেবেছি যে, কোথাও না কোথাও আমি একটি লিগ শিরোপা জিতব। আমি সেই লোক, যাকে গ্রিস বরখাস্ত করেছিল; সেখানে কেউ হয়ত আমার ক্যারিয়ারের বিষয়ে ভুলেই গিয়েছিল।”

প্রথমবারের মতো সাফল্যের চূড়ায় বসেও বরাবরের মতোই বাস্তববাদী রানিয়েরি। মাসখানেক আগে শিরোপার কাছে পৌঁছেও যেমন তিনি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মুখ ফুটে কিছু বলেননি।

নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে রানিয়েরি বলেন, “আমি লেস্টারে থাকছি। এটা একটা বছর, যার পুনরাবৃত্তি হতে পারে না। পরের বছর আমরা শীর্ষ দশে থাকার জন্য লড়াই করব। আমরা অবশ্যই উন্নতি করতে থাকব এবং ভালো করব।”