দুর্দান্ত ‘এমএসএন’-এ বার্সার গোল উৎসব

লিওনেল মেসির দুর্দান্ত ফ্রি-কিক, লুইস সুয়ারেসের হ্যাটট্রিক, সঙ্গে নেইমার ও ইভান রাকিতিচের গোল- সব মিলিয়ে সেল্তা ভিগোকে উড়িয়ে দিল বার্সেলোনা। তবে গতবারের ‘ট্রেবল’ জয়ীদের গোল উৎসবের রাতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে গেল মেসি-সুয়ারেসের ‘বন্ধুত্ব’।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2016, 09:47 PM
Updated : 17 Feb 2016, 02:20 PM

রোববার কাম্প নউয়ে হওয়া লা লিগার ম্যাচটি ৬-১ গোলে জেতে বার্সেলোনা। গত সেপ্টেম্বরে প্রথম পর্বের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতেছিল সেল্তা।

প্রতিশোধের লক্ষ্যে বার্সেলোনার ম্যাচের শুরুটা হতে পারতো দারুণ, কিন্তু তিন মিনিটের ব্যবধানে দুবার গোল পেতে পেতেও হতাশায় শেষ হয়। দ্বাদশ মিনিটে ২০ গজ দূর থেকে লিওনেল মেসির বাঁকানো ফ্রি কিক অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পর গোলরক্ষককে একা পেয়েও কাছ থেকে বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন নেইমার।

উনিশতম মিনিটে মেসি-জাদু বিফলে যাওয়ায় ফের হতাশায় ডোবে কাম্প নউ। দুইজনকে কাটিয়ে নেইমারের সঙ্গে একবার বল দেওয়া-নেওয়ার মাঝে ডি বক্সে ঢুকে আরও দুই জনকে ফাঁকি দিলেও শেষ পর্যন্ত বলে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি আর্জেন্টিনার অধিনায়ক।

প্রতিপক্ষের আক্রমণ সামলে মাঝে মধ্যে পাল্টা আক্রমণে ওঠা সেল্তা ২৪তম মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল, তবে প্রায় ১৭ গজ দূর থেকে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার প্লানাসের বাঁ পায়ের দুর্দান্ত শটটি দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক।

এর তিন মিনিট পরেই মেসির চমৎকার এক ফ্রি কিকে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। পাঁচবারের বর্ষসেরা তারকার শটটি শেষমুহূর্তে সামান্য বাঁক খেয়ে জালে জড়ায়।

এবারের লা লিগায় পঞ্চমবারের মতো ফ্রি-কিক থেকে লক্ষ্যভেদ করলেন মেসি। লিগে তার মোট গোল হলো ১৩টি।

এরপর আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে জমে ওঠা লড়াইয়ে ৩৯তম মিনিটে ডি বক্সে ঢুকে পড়া সুইডেনের স্ট্রাইকার জন গুইদেত্তিকে স্বাগতিক ডিফেন্ডার জর্দি আলবা ফাউল করলে পেনাল্টি পায় সেল্তা। তা থেকে নিজেই দলকে সমতায় ফেরান গুইদেত্তি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ৩০ সেকেন্ডের ব্যবধানে দুটি সুযোগ হাতছাড়া হয় বার্সেলোনার; প্রথম মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও ব্যর্থ হন নেইমার। পরে এই ব্রাজিলিয়ান তারকার পাসে সুয়ারেসের শট পোস্টে বাধা পায়। ৫৬তম মিনিটে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার শট ঠেকিয়ে দেন সেল্তার গোলরক্ষক।

একের পর এক আক্রমণ করে যাওয়ার সুফল বার্সেলোনা পায় ৫৯তম মিনিটে। রক্ষণের উপর দিয়ে মেসির চিপ করে বাড়ানো বল ডি বক্সে পেয়ে প্রথম শটেই লক্ষ্যভেদ করেন সুয়ারেস।

এই অর্ধের এতক্ষণ সময় মূলত প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকাতেই ব্যস্ত থাকা সেল্তা ফের পিছিয়ে পড়ে ধীরে ধীরে পাল্টা আক্রমণে উঠতে থাকে। দুবার সুযোগও পেয়েছিল তারা, কিন্তু সাফল্য মেলেনি।

এরপর ৭৫তম মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলে জয়টা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন সুয়ারেস। গোলটির পুরো কৃতিত্বই নেইমারের, গোলরক্ষককে কাটিয়ে দুরূহ কোণ থেকে তার নেওয়া শটে গোললাইনের সামনে থেকে আলতো একটা ছোঁয়াতেই বাকি কাজটুকু সারেন লিভারপুলের সাবেক এই স্ট্রাইকার।

আর ৮১তম মিনিটে ফুটবলের গণ্ডি ছাড়িয়ে মেসি-সুয়ারেস যেন গড়লেন নতুন কিছুর উদাহরণ। এবারের ফিফা ব্যালন ডি’অর জয়ীকে ডি বক্সের মধ্যে ডিফেন্ডার কাস্ত্রো ফেলে দিলে পেনাল্টি পায় বার্সেলোনা। স্পটকিক নিতে এগিয়ে এলেন মেসি নিজেই, দৌড়ে এসে জোরে শট না নিয়ে ছোট্ট একটা টোকা দেন মেসি; আর ছুটে এসে জোরালো শটে বল জালে জড়িয়ে হ্যাটট্রিকের আনন্দে ভাসেন সুয়ারেস।

দুই শিষ্যের এমন কাণ্ড দেখে ডাগআউটে হাসিতে ফেটে পড়লেন কোচ লুইস এনরিকে।

এ বছর সুয়ারেসের এটি তৃতীয় হ্যাটট্রিক। এরই সঙ্গে এবারের লিগের গোলদাতাদের তালিকায় ২৩ গোল নিয়ে ফের শীর্ষে উঠলেন তিনি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর গোল ২১টি।

এর তিন মিনিট বাদে সুয়ারেসের বাড়ানো বল ধরে গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন ইভান রাকিতিচ।

আর সবশেষে ম্যাচের শেষ দিকে স্কোরশিটে নাম লেখান নেইমার। সুয়ারেসের বাড়ানো বল দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন নেইমার। লিগে এটি তার সপ্তদশ গোল।

এই জয়ে আতলেতিকো মাদ্রিদের সঙ্গে তিন পয়েন্টের ব্যবধান ধরে রাখলো বার্সেলোনা। শীর্ষে থাকা দলটির পয়েন্ট ২৩ ম্যাচে ৫৭। এক ম্যাচ বেশি খেলা দিয়েগো সিমেওনের দলের পয়েন্ট ৫৪।

তৃতীয় স্থানে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের পয়েন্ট ৫৩।