প্রস্তুতির ঘাটতিতে সাঁতারে নেই প্রতিশ্রুতি

দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) গত ১১ আসর মিলিয়ে বাংলাদেশের জেতা ৬৩টি সোনার পদকের মধ্যে ১৫টিই এসেছে সাঁতার থেকে। কিন্তু এবার? কোচ কিংবা সাঁতারু কারো মুখে নেই সোনা এনে দেওয়ার ঘোষণা।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2016, 02:07 PM
Updated : 3 Feb 2016, 02:07 PM

গত বছরের অগাস্ট থেকে মিরপুরের সুইমিং পুলে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। গত নভেম্বর দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ান কোচ পার্ক তে গুন। প্রস্তুতির কমতি থাকায় ৫ ফেব্রুয়ারি ভারতের গুয়াহাটি-শিলংয়ে শুরু হতে যাওয়ার আসরের সাঁতার ইভেন্ট থেকে পদকের নিশ্চয়তা নেই কোচের কণ্ঠে।

২০১০ সালের আসরে নিজেদের পুলে ৬টি রুপা ও ১০টি ব্রোঞ্জ জিতেছিল বাংলাদেশের সাঁতারুরা। এবার পুরুষ, মহিলা মিলিয়ে হবে ৩৮টি সোনার লড়াই। কিন্তু গত আসরকে ছাপিয়ে ১০ বছর ধরে চলা সোনার পদকের খরা কাঁটানোর প্রতিশ্রুতি দিতে পারছেন না পার্ক।

“অন্যরা বছর জুড়ে অনুশীলন করে। আমি শুরু করেছি গত নভেম্বরে। তাই সোনার নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।”

এসএ গেমসে বাংলাদেশের জেতা ১৫টি সোনার পদকের সাতটিই ব্রেস্ট স্ট্রোক ইভেন্ট থেকে। ভারতে ১৯৮৭ গেমসে ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে দেশের হয়ে প্রথম সোনা জেতেন বজলুর রহমান। এরপর ১৯৮৯ সালে ১০০ মিটার, ১৯৯১ সালে ২০০ মিটার ও ১৯৯৩ সালে ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে সোনা জেতেন মোখলেসুর রহমান। ১৯৯৩ সালের আসরে ২০০ মিটারে ব্রেস্ট স্ট্রোকে সোনা জেতা কারার মিজান ১৯৯৫ সালেও একই ইভেন্টে দেশকে উপহার দেন সোনার হাসি।

২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কা গেমসে ৫০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে দেশকে সোনা উপহার দিয়েছিলেন শাজাহান আলী রনি; এই পদকটিই এসএ গেমসের সাঁতারে বাংলাদেশের সর্বশেষ সোনা। দেরিতে হলেও বিদেশি কোচ পাওয়ায় খুশি রনি। কিন্তু গত আসরে অল্পের জন্য সোনার পদক হারানো এই সাঁতারু এবারও বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছেন না।

“প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো। লক্ষ্য আছে সোনার পদক জেতার; কিন্তু বাস্তবতা হলো এটা জেতা আমাদের জন্য কঠিন।”

সোনার পদক জেতার কাজটা কঠিন হওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে রনি বললেন, “গত বছর আমাদের জাতীয় প্রতিযোগিতা হয়নি। ওদের (সাফের প্রতিপক্ষ) টাইমিংয়ের সঙ্গে আমাদের ব্যবধান আছে। তাছাড়া এসএ গেমসে অন্য দেশগুলোর সাঁতারুদের অনেকে দেশের বাইরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়; আমরা নিতে পারি না। এখানে আমরা পিছিয়ে আছি।”

মাহফিজুর রহমান সাগর ও নাজমা খাতুন-এই দুই জন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) বৃত্তি নিয়ে পাঁচ মাস থাইল্যান্ডে প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্যাম্পে ফিরেছেন। গত বাংলাদেশ গেমসে ক্যারিয়ার সেরা টাইমিং করা সাগর অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে প্রত্যয়ী। কিন্তু সোনার পদক জয়ের নিশ্চয়তা নেই তার কণ্ঠে।

“সোনার পদক জিততে পারব কিনা বলতে পারব না। ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে এসএ গেমসের রেকর্ড ৫২.৮৫; আমার লক্ষ্য এই রেকর্ড ভাঙা।”

“আমাদের যথেষ্ঠ সুযোগ-সুবিধা নাই; আর্থিকভাবেও আমরা লাভবান হই না। আমাদের শুধু জাতীয় একটা প্রতিযোগিতা হয়। যদি আমাদের এখানে ক্লাব পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হতো, তাহলে ভালো হতো। এখন যে অবস্থা, আমরা সাঁতার ভালোবাসি, তাই রয়েছি”, যোগ করেন সাগর।

নাজমাও কণ্ঠ মেলালেন সাগরের সঙ্গে। ফ্রি স্টাইলের চার ইভেন্টে পদকে লড়াইয়ে নামার কথা জানিয়ে উঠতি এই সাঁতারু বলেন, “প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো। এটা আমার প্রথম এসএ গেমস। যতটুকু প্রস্তুতি নিয়েছি, তাতে সোনার পদক পাওয়ার আশা আছে। থাইল্যান্ডের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগবে; নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করব।”

“সবাই তো সোনার পদকই আশা করে। আমিও করি। (এসএ গেমসের প্রতিপক্ষ) তাদের সঙ্গে আমার ব্যবধান ১৯-২০। আমরা যদি সেরাটা দিতে পারি; তাহলে অবশ্যই ভালো হবে”, যোগ করেন নাজমা।