রোনালদোর নৈপুণ্যে রিয়ালের নাটকীয় জয়

লা লিগায় টানা দুই ম্যাচ হারলেও উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর দারুণ নৈপুণ্যে শাখতার দোনেৎস্কের মাঠে নাটকীয় জয় পেয়েছে ইউরোপের সফলতম দলটি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2015, 10:18 PM
Updated : 25 Nov 2015, 10:41 PM

বুধবার রাতে শেষ ১৫ মিনিটের চরম নাটকীয়তার পর ৪-৩ গোলের জয় নিয়ে ফিরেছে রিয়াল। এই জয়ে গ্রুপের সেরা হওয়াটাও নিশ্চিত হয়েছে রিয়ালের।

প্রথম রাউন্ডে ইউক্রেনের দলটিকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল স্পেনের দলটি।

শাখতারের মাঠে দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো রিয়াল। লুকা মদ্রিচের দারুণ এক পাস পেয়ে ডি বক্সের মধ্যে থেকে শট নেন রোনালদো, কিন্তু বল পোস্টের উপর দিয়ে চলে যায়।

মাঝ মাঠে মদ্রিচ ও ইসকোর বোঝাপড়ায় অধিকাংশ সময় বল দখলে রেখেই খেলতে থাকে রিয়াল। কিন্তু আক্রমণভাগে রোনালদো ঠিক জ্বলে উঠতে পারছিলেন না। তবে গ্যারেথ বেলের পায়ে গতির আভাস ছিল যথেষ্ট।

পুরোপুরি জ্বলে উঠতে না পারলেও ১৭তম মিনিটে বেলের গতিতে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি রোনালদো।

বাঁ দিক থেকে ক্ষিপ্র গতিতে ডি বক্সে ঢুকে গোললাইনের কাছ থেকে উঁচু করে বল বাড়ান ওয়েলস ফরোয়ার্ড। তাকে রুখতে স্বাগতিক গোলরক্ষক এগিয়ে গেলে বিনা বাঁধায় ডান পোস্টের কোল ঘেঁষে হেডে বল জালে জড়ান পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড রোনালদো।

প্রথমার্ধের বাকিটা সময়েও বল দখলে বা সুযোগ তৈরিতে এগিয়ে ছিল রিয়াল। কিন্তু রোনালদো-বেলরা নিজেদের নামের প্রতি ঠিক সুবিচার করতে না পারায় বিরতির আগে আর ব্যবধান বাড়েনি।

দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য রিয়ালের সামনে আর বাধা হয়ে থাকতে পারেনি শাখতার। চতুর্থ মিনিটেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন লুকা মদ্রিচ। প্রতি-আক্রমণে লম্বা পাস পেয়ে ডান দিক দিয়ে ডি বক্সে ঢুকে এক জনকে কাটিয়ে আলতো করে বল বাড়ান রোনালদো। তা থেকেই নিখুঁত শটে মৌসুমে নিজের প্রথম গোলটি করেন ক্রোয়েশিয়ার এই মিডফিল্ডার।

পরের মিনিটেই ব্যবধান আরও বাড়াতে পারতো রিয়াল, কিন্তু মদ্রিচের বাড়ানো বল ধরে রোনালদোর শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন শাখতার গোলরক্ষক।

এক মিনিট বাদেই সতীর্থ দানি কারভাহালকে দিয়ে ঠিকই স্কোরলাইন ৩-০ করান রোনালদো। তার ছোট পাস পেয়ে সামনে দাঁড়ানো প্রতিপক্ষের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল বের করে ঠাণ্ডা মাথায় গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে জালে জড়ান স্প্যানিশ ডিফেন্ডার কারভাহাল।

এই অর্ধের শুরু থেকেই দারুণ খেলা রোনালদো ৭০তম মিনিটে ব্যবধান ৪-০ করেন। এই গোলেও দারুণ অবদান ছিল বেলের; মাঝ মাঠের কাছ থেকে বল পায়ে দ্রুত গতিতে ছুটে বাঁ দিক দিয়ে ডি বক্সে ঢুকে ব্যাক পাস দেন তিনি, তা থেকেই বল জালে জড়ান রোনালদো।

২০০৯ সালে রিয়ালে যোগ দেওয়ার পর রোনালদোর এটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৬৮ ম্যাচে ৬৯তম গোল। ইউরোপ সেরার এই প্রতিযোগিতায় সর্বমোট তার গোল হলো ৮৪টি।

রোনালদোর দ্বিতীয় গোলের পর রিয়াল সমর্থকেরা নিশ্চয় আরেকটি বড় জয়ের প্রত্যাশাই করছিল। কিন্তু ছয় মিনিটের ব্যবধানে শাখতার দুটি গোল শোধ করে দিলে নাটকীয়তার সম্ভাবনা জাগে।

বদলি নামা ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার তাইসোনকে নিজেদের ডি বক্সে রিয়ালের কাসেমিরো ফাউল করলে পেনাল্টি পায় শাখতার। তা থেকেই প্রথম গোলটি করেন আরেক ব্রাজিলিয়ান আলেক্স তেইশেইরা।

আর ৮৩তম মিনিটে কর্নার থেকে ইউক্রেনের মিডফিল্ডার স্তেপানেনকোর হেডে বল পেয়ে পেছনের পোস্টের কাছে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা আরেক ব্রাজিলিয়ান দেনতিনিয়ো দ্বিতীয় গোলটি করেন।

পাঁচ মিনিট বাদে তেইশেইরা নিজের দ্বিতীয় গোল করলে ম্যাচে চরম নাটকীয়তার আভাস মেলে। শেষ পর্যন্ত সমতা ফেরাতে পারেনি শাখতার।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার কাছে ৪-০ গোলের হারসহ লা লিগায় টানা দুটি পরাজয়ের পর  স্বস্তির এক জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে রাফায়েল বেনিতেসের দল।     

অন্য ম্যাচে পিএসজি ৫-০ গোলে সুইডেনের ক্লাব মালমোকে হারিয়ে ‘এ’ গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল হিসেবে নক্‌আউট পর্ব নিশ্চিত করেছে।

পিএসজির পক্ষে জোড়া গোল করেন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার আনহেল দি মারিয়া। আর একটি করে গোল করেন জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, লুকাস মউরা ও আদ্রিয়াঁ রাবিও।

পাঁচ ম্যাচে রিয়ালের পয়েন্ট ১৩। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পিএসজির পয়েন্ট ১০।