সাফ ফুটবলের শিরোপা চাই মারুফুলের

প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পেলেও উচ্ছ্বাসটা চেপে রাখলেন মারুফুল হক। চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সুরে লক্ষ্যটা জানিয়ে দিলেন, সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা চান তিনি।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2015, 03:06 PM
Updated : 24 Nov 2015, 03:08 PM

লোডভিক ডি ক্রুইফের বিদায়ের পর গত সেপ্টেম্বরে ফাবিও লোপেজকে কোচ করে আনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ইতালির এই কোচ প্রত্যাশার ছিটেফোঁটাও পূরণ করতে পারেননি; টানা পাঁচ ম্যাচ হারা কোচের বিদায়ঘণ্টা বেজেছে মঙ্গলবার। একই দিনে দায়িত্ব উঠেছে মারুফুলের হাতে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া এই কোচ জানালেন সাফের লক্ষ্যসহ অনেক কিছু।

দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ

কিছু দিন আগেই দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্সধারী কোচ হয়েছেন মারুফুল। এমন অর্জনে চুপচাপ থাকা এই কোচ নতুন দায়িত্ব নিয়েও আগের মেজাজে থাকলেন। তাই প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের কোচ হওয়াটা তার কাছে দায়িত্ব আর চ্যালেঞ্জের বাইরে কিছু নয়।

“এটা আসলে আমার কাছে ওভাবে আনন্দের বিষয় নয়। এটা দায়িত্বের, চ্যালেঞ্জের বিষয়। জাতীয় দলের দায়িত্বকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। নিজের যতটুকু অভিজ্ঞতা আছে, তা-ই ঢেলে দেব দলকে সাফল্যে এনে দেওয়ার জন্য।”

ঘরোয়া ফুটবলের ক্লাব পর্যায়ে সাফল্য পাওয়ার দারুণ অভিজ্ঞতা আছে মারুফুলের। তার অধীনেই  ২০১২-১৩ মৌসুমে ট্রেবল জিতেছিল শেখ রাসেল। সেবার লিগ শিরোপা, ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপ নিজেদের করে নিয়েছিল দলটি।

শেখ রাসেল থেকে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের কোচ হন মারুফুল। ২০১৪ সালে তার হাত ধরেই ভুটান থেকে কিংস কাপ জিতে ফেরে দলটি। এছাড়া শেখ জামালকে ২০১৩-১৪ মৌসুমের লিগ শিরোপাও জেতান তিনি।

ঢাকা মোহামেডানের কোচ হিসেবে ২০০৯ সালে কোটি টাকার সুপার কাপের প্রথম আসরের শিরোপা জেতেন মারুফুল। ঘরোয়া ফুটবলের ঐতিহ্যবাহী দলটিকে ফেডারেশন কাপের দুটি শিরোপাও এনে দেন তিনি।

মামুনুলদের নিয়ে পরীক্ষা নয়

লোপেজর পথে হাঁটবেন না মারুফুল। মামুনুল, বাতেন, রনিদের পজিশন বদলে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন লোপেজ। মিডফিল্ডার মামুনুলকে রাইট উইংয়ে, ফরোয়ার্ড আবুল বাতেন মজুমদার কমল ও শাখাওয়াত রনিকে মিডফিল্ডার বানিয়ে বেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান এই ইতালিয়ান। ফলাফল শূন্য। তাই আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে মাঠে গড়াতে যাওয়া সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য আসা লোপেজ ছাঁটাই হলেন দায়িত্বের তিন মাস পূরণের আগেই। 

২৩ ডিসেম্বর ভারতে শুরু হবে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের একাদশ আসর। প্রস্তুতির সময়টা বেশি নয় বলেও এ মুহূর্তে দল নিয়ে কোনো পরীক্ষায় যেতে চান না মারুফুল।

“দেখুন, আমাদের কিন্তু হাতে গোনা প্লেয়ার। বৈচিত্র কম। তাই জাতীয় দল বা ক্লাব পর্যায়ে যে যেই পজিশনে খেলতে অভ্যস্ত, তাকে সেখানেই খেলানোর পরিকল্পনা আমার। হাতে সময়ও কম; এ মুহূর্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাওয়া কঠিন।”

লক্ষ্য সাফের শিরোপা

সেই ২০০৩ সালে বাংলাদেশ প্রথম ও এখন পর্যন্ত সর্বশেষ সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল। নিজেদের মাঠে শ্বাসরুদ্ধকর টাইব্রেকারে মালদ্বীপকে ৫-৩ গোলে হারিয়েছিল কাঞ্চন-মাহমুদুল হাসানরা। পরের আসরে ‍শিরোপা ধরে রাখার কাছাকাছি গিয়েও পারেনি বাংলাদেশ; পাকিস্তানের মাঠে ভারতের কাছে ফাইনালে ২-০ ব্যবধানে হেরে যায়।

২০০৫ সালে রানার্সআপ হওয়ার পর থেকে এই আসরে বাংলাদেশ আর সেভাবে পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে পারেনি। পরের চার আসরের মধ্যে ২০০৯ সালে সেমি-ফাইনালে ওঠাই সেরা সাফল্য। বাকি তিন আসরের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়া বিষাদ হয়েছিল সঙ্গী। সাফ নিয়ে তাই বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহ-আক্ষেপ দুটোই মারুফুলের জানা।

“এটা যেহেতু আমাদের এই অঞ্চলের আসর, সেহেতু এটা নিয়ে আর সবার মতো আমাদের দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়াটা বেশি। এটা জেনেই চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছি আমি।”

এবারের সাফে বাংলাদেশের গ্রুপ পর্বের পথচলাটা বেশ কঠিন। শিরোপাধারী আফগানিস্তান আছে মামুনুলদের ‘বি’ গ্রুপে। বাকি দুই দল ভুটান ও মালদ্বীপ। বাংলাদেশ এবার নিজেদের প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আফগানিস্তানের। তবে সব বাধা পেরিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রত্যয়ী মারুফুল।

“আমার দায়িত্ব সাফ পর্যন্ত। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের এই আসরটি এখন অনেক কঠিন; প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তবে চ্যাম্পিয়ন হয়েই এবারের আসর শেষ করতে চাই আমি।”