রোববার জাতীয় মহিলা দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা এক রাউন্ড বাকি থাকতে জিতে নিয়েছেন লিজা। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জয়ের উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ার আক্ষেপের কথাও শোনালেন তিনি।
চতুর্থবারের মতো চ্যাম্পিয়ন
জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে এবার বাংলাদেশের প্রথম মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার রানী হামিদকে হারিয়েছেন লিজা। দশম রাউন্ডে ফিদে মাস্টার নাজরানা খান ইভার বিপক্ষে জিততে অবশ্য ৫২ চাল পর্যন্ত লড়তে হয়েছে তাকে।
২০০৫ সালে প্রথমবার জাতীয় দাবায় সেরা হওয়া লিজা এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার এবং সব মিলিয়ে চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন হলেন। তবে মেয়েদের দাবায় এবার তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুঁজে পাননি তিনি।
“নতুন অনেকে এবার খেলছে বলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা একটু কম। তবে, নতুনরা উঠে আসাও দাবার জন্য একটা ভালো খবর।”
ইউরোপ থেকে দেশে ফেরা
বছর চার আগে স্বামী মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে পর্তুগালে থিতু হয়েছেন লিজা। দেশের সঙ্গে সম্পর্কটা এখন অতিথির মতো; আসা-যাওয়ার। এবারও লম্বা সময় দেশের থাকার সম্ভাবনা নেই। নারায়ণগঞ্জের সরকারী তোলারাম কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়া লিজা দেশে এসেছেন মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে। সেই সুবাদে জাতীয় দাবায় খেললেন।
পর্তুগালে পাড়ি জমানোর পর ফ্রান্স, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, নরওয়ে, ইংল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্র মিলিয়ে দশটি টুর্নামেন্ট খেলেছেন লিজা। জানালেন ইউরোপে খেলার অভিজ্ঞতার কারণেই এবার বাকিদের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে ছিলেন তিনি।
“লম্বা সময় ইউরোপে থেকেছি; সেখানে খেলায় অভিজ্ঞতা বেড়েছে এবং হতে পারে, সে কারণে এবার অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ছিলাম।”
পৃষ্ঠপোষকতার সংকট
লিজার বর্তমান রেটিং পয়েন্ট ২১৬২। গত বছরের মতো ধারাবাহিকভাবে ইউরোপের আসরগুলোয় খেলতে পারলে রেটিং পয়েন্ট এতদিনে ২২০০ হয়ে যেতো। হয়তো মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার জন্য তিনটে নর্মের ঘাটতি পূরণের পথে এগিয়েও যেতে পারতেন তিনি। পারেননি কেবল পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে।
হতাশ কণ্ঠে লিজা বললেন, “ইউরোপের টুর্নামেন্টগুলো খেলেছি নিজের খরচে। ওগুলো ব্যয়বহুল; একা এত ব্যয় বহন করা যায় না। (খরচের জন্য) ফেডারেশনকেও বলেছি কিন্তু সাড়া পাই না। স্পন্সররাও এগিয়ে আসে না।”
দাবা ফেডারেশনের টানাটানির সংসার জেনেই তাদের কাছে লিজার চাওয়াটা খুব বেশি নয়। শুধু পৃষ্ঠপোষকরা একটু এগিয়ে এলেই স্বপ্নটা পূরণ হয়ে যায় বলে বিশ্বাস তার।
“দেশে কত বড় বড় প্রতিষ্ঠান; কত খেলায় তো তারা কত কিছু দেয়। কিন্তু এদিকে কেউ তাকায় না। স্পন্সররা একটু এগিয়ে এলে, ফেডারেশন বিদেশী ভালো কোচের ব্যবস্থা করে দিলেই তো আমার স্বপ্নটা পূরণ হয়ে যায়।”
একসময় বাংলাদেশের প্রথম মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার স্বপ্নও দেখেন। কিন্তু দেশে বড় টুর্নামেন্ট না হওয়া আবার পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দেশের বাইরে বড় আসরে নিয়মিত খেলতে না পারায় সে স্বপ্ন অঙ্কুরেই ঝড়ে যাওয়ার জোগাড়। স্পন্সর না পেলে এভাবে আর কতদিন? এমন প্রশ্নের জবাবে অনেকটা হতাশা নিয়ে তাই লিজা বললেন, “স্পন্সররা এগিয়ে না এলে এভাবে একা একা লড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। লড়ব না। একা লড়তে লড়তে ক্লান্ত আমি।”