২২ বছর আগের সেই অতীত আবার সমর্থকদের মনে করিয়ে দিল একুয়েডর। গত শুক্রবার লিওনেল মেসিহীন আর্জেন্টিনার হারল প্রায় দুই মিনিটের মধ্যে দুই গোল হজম করে; ২-০ ব্যবধানে।
কলম্বিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ওই হারের পর গ্যালারিতে মারাদোনাকে ফিরিয়ে আনার দাবি ওঠে। দলে ফিরে আর্জেন্টিনাকে পথেও ফেরান এই ফুটবল কিংবদন্তি।
চোটের কারণে একুয়েডরের বিপক্ষে খেলেননি মেসি। কিন্তু দলের সেরা তারকার অভাব নিয়ে গ্যালারিতে হাহাকারটা শোনা যায়নি! সমর্থকদের এই নীরবতা ইঙ্গিত দিচ্ছে, আর্জেন্টিনার বর্তমান দলটির সঙ্গে তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক অতটা নয়, যতটা ছিল মারাদোনার সময়ে।
এই না থাকার কোনো কারণ যে নেই, তাও নয়। ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় ও সর্বশেষ বিশ্বকাপ জেতার পর ১৯৯৩ সালের কোপা আমেরিকার শিরোপাই বৈশ্বিক বড় কোনো আসরে আর্জেন্টিনার শেষ সাফল্য। ২০১৪ বিশ্বকাপ ও ২০১৫ সালের কোপা আমেরিকায় সে খরা ঘোচানোর সুযোগ নিয়ে এসেছিল। কিন্তু দুটি আসরেই ফাইনালে হেরে যায় মেসি-আগুয়েরোদের আর্জেন্টিনা।
বাছাই পর্বে একুয়েডরের কাছে হারটিও সতর্ক বার্তাই হয়ে এল আর্জেন্টিনা কোচ জেরার্দো মার্তিনোর জন্য। বিশেষ করে পাবলো সাবালেতা ও মার্কোস রোহোর অনুপস্থিতিতে তার রক্ষণভাগ ছিল নড়বড়ে। কিন্তু তিনি দলকে পুরোপুরি আক্রমণাত্মক খেলিয়েছেন; ম্যাচ শেষে মাশুলও গুণেছেন।
ফুলব্যাক ফাকুন্দো রনকাগলিয়া এবং ইমানুয়েল মাস তাদের প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে অভিষেকে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা একুয়েডরের দুই উইঙ্গার জেফারসন অন্তেরো ও আন্তোনিও ভালেন্সিয়ার চারপাশে কেবল দৌড়ে বেড়িয়েছেন। দুজনে মাঝ মাঠ থেকেও তেমন কোনো সমর্থন পাননি।
নিজের কাজটা করতে পারেননি হাভিয়ের পাস্তুরেও। ম্যাচে কোনো প্রভাব ফেলতে হলে মেসিকে পাশে পাওয়ার দরকার এই মিডফিল্ডারের।
ম্যাচ শেষের প্রতিক্রিয়ায় একটা দল হয়ে উঠতে না পারাটা স্বীকার করে নিয়েছেন আর্জেন্টিনা কোচ মার্তিনো। ঠিকঠাক বল পায়ে রাখতে না পারা, মুভগুলো নিখুঁত না হওয়াটা মেনে নিয়ে বলেছেন, “বাজে খেলাটাই আমাদের ক্ষতির দিকে নিয়ে গেছে।”
আসলে, (একুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচে) মেসির না থাকাটাই আসলে আর্জেন্টিনার হারের বীজ বুনে দিয়েছিল। সের্হিও আগুয়েরোকে নিয়ে আশা ছিল। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগের সর্বশেষ ম্যাচে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপক্ষে পাঁচ গোল করেন তিনি। ওই সময়ও আগুয়েরো পুরোপরি ফিট ছিলেন না।
আর্জেন্টিনা দলে মার্তিনোর জামানা শুরু হওয়ার পর থেকে ১১ গোল করেছেন আগুয়েরো কিন্তু (একুয়েডর ম্যাচের আগে) এ সপ্তাহে যথাযথভাবে অনুশীলন করতে পারেননি সিটির এই স্ট্রাইকার। তারপরও মার্তিনো বলেছিলেন, আগুয়েরো ভালো আছে এবং মেসির ১০ নম্বর জার্সি পরে সে খেলবে।
কিন্তু ম্যাচের আধ ঘন্টা খেলা শেষের আগেই পায়ের চোটে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় আগুয়েরোকে। তার বদলে নামেন কার্লোস তেভেস। বোকা জুনিয়র্সের এই ফরোয়ার্ডকে উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছে রিভার প্লেটের গ্যালারি কিন্তু বাজে খেলেছেন তিনি।
মার্তিনোর অধীনে খুব অল্প সময়ই তেভেজকে খেলতে দেখা গেছে। একুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচেও কোচ তার বোকা জুনিয়র্সে খেলা পজিশনের বদল করেছেন।
ডান দিকে মেসির জায়গা আনহেল দি মারিয়াকে শুরু থেকে খেলিয়েছেন মার্তিনো; ১৮ মাস ধরে নিজের সেরাটা খুঁজে ফেরা এই মিডফিল্ডারকে এ ম্যাচে সংগ্রাম করতে হয়েছে।
মোদ্দা কথা, নতুন করে জীবন পাওয়া প্যারাগুয়েকে আগামী মঙ্গলবারের ম্যাচে হারাতে হলে, বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শুরুর ধাক্কা সামলে ভালো করতে হলে আর্জেন্টিনাকে দ্রুতই রিভার প্লেটের ক্ষত সারিয়ে নিতে হবে।