উত্তেজনা ছড়ানো লিগে দর্শক নিয়ে আক্ষেপ

শেখ জামালের শিরোপা ধরে রাখা, আবাহনীর অধপতন, ফরাশগঞ্জের খেলা শেষ না করেই মাঠ ছাড়ার মতো একটি বিতর্ক আর দর্শকশূন্যতা-এক ঝলকে এই ছিল ২০১৪-১৫ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ মৌসুম।  

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2015, 02:23 PM
Updated : 23 August 2015, 02:23 PM

গত শনিবার শেষ হওয়া লিগে শুরু থেকেই ফেভারিট ছিল শেখ জামাল। জাতীয় দলের বেশিরভাগ ফুটবলারই যে খেলে তাদের দলে। ফরাশগঞ্জকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শুরুর পর শেষটা তারা টেনেছে আবাহনীর বিপক্ষে মর্যাদার ম্যাচে ২-১-এ জিতে।

২০ ম্যাচে ১৬টি জয়, ৩টি ড্র আর একটি হার শেখ জামালের। মামুনুল ইসলামদের একমাত্র হারের স্বাদ প্রথম পর্বের ম্যাচে দিয়েছিল আবাহনী। ৫১ পয়েন্ট পাওয়া জামাল দুই ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলে। লিগে প্রতিপক্ষের জালে ৬০বার বল জড়ানোর বিপরীতে তারা হজম করেছে ২২টি গোল।

লিগে সময় যত গড়িয়েছে, শেখ জামাল ততই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেছে। এক সময় মনে হচ্ছিল শেখ রাসেল ও মোহামেডানের কেউ দলটির পথ আগলে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু প্রথম পর্বের গতি দ্বিতীয় পর্বে ধরে রাখতে না পারায় মোহামেডান ছিটকে গেছে শিরোপা দৌড় থেকে; ১১ জয় ও ৫ ড্রয়ে পাওয়া ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয়েছে ঐতিহ্যবাহী দলটি।

১৩ জয় আর ৩ ড্রয়ে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ হয়েছে শেখ রাসেল। যে চারটি ম্যাচের হারে জাহিদ হাসান এমিলিদের দলের শিরোপা স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় তার দুটিই ছিল শেখ জামালের বিপক্ষে। চ্যাম্পিয়নদের কাছে প্রথম পর্বে ১-০ ও দ্বিতীয় পর্বে ৪-৩ গোলে হারে তারা। এই ক্ষতি আর পুষিয়ে উঠতে পারেনি তারা। আর তাই ২০১২-১৩ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নদের এবার রানার্সআপ হওয়ার সন্তুষ্টি নিয়ে লিগ শেষ করতে হল।

লিগের সর্বোচ্চ চারবারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর শুরুটাই এবার ভালো হয়নি। আগের বারের রানার্সআপরা লিগের শুরুতেই ফরাশগঞ্জের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে। শেখ জামালের কাছে হার দিয়ে লিগ শেষ করা আবাহনীর জয় ১০টি; বাকি ১০ ম্যাচে ৫টি করে ড্র ও হার তাদের।

লিগে বিদেশী ফরোয়ার্ডদের দাপটের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রকে বলতে গেলে একাই টেনেছেন এনামুল হক। কিন্তু লম্বা বিরতির পর জাতীয় দলে ফেরা এই ফরোয়ার্ড দলকে বেশি দূর নিতে পারেননি। গোলদাতাদের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে থাকা এনামুল লিগে ১৩বার প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ান। তার দল মুক্তিযোদ্ধা ২৮ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে থেকে লিগ শেষ করে।

বাংলাদেশের ফুটবলে এক সময়ের পরাশক্তি লাল জার্সির ব্রাদার্স ইউনিয়ন এখন রং হারিয়ে অনেকটাই বিবর্ণ। এখন তারা মাঝেমধ্যে বড় দলগুলোকে চমকে দেওয়া ক্লাব।

প্রিমিয়ার লিগে অভিষেকের মৌসুমেই বিস্ময় জাগানিয়া পারফরম্যান্স করেছিল ফেনী সকার ক্লাব। অনেকেই তাদের 'জায়ান্ট-কিলার' তকমাও দিয়ে দিয়েছিল। এবার আর তারা আলো ছড়াতে পারেনি।

চট্টগ্রাম আবাহনী সেই ছোট দল হয়েই রইল। সীমানা পেরোতে পারেনি বিজেএমসিও, তারাও সেই মধ্যমানের তকমা নিয়েই লিগ শেষ করেছে।

অবনমিত হওয়ার আগে একটি বিতর্ক জন্ম দিয়ে গেছে ফরাশগঞ্জ। এগার দলের মধ্যে সবার শেষে থেকে লিগ শেষ করা ক্লাবটি শেখ রাসেলের বিপক্ষে দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচটি না পুরো না খেলেই মাঠ ছেড়েছিল।

গত ৩ অগাস্ট শেখ রাসেলের বিপক্ষে ম্যাচ চলার মধ্যেই রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে কর্মকর্তাদের ইশারায় মাঠে ছাড়ে দলটির ফুটবলাররা। ‘অপেশাদার’ আচরণের উদাহরণ রেখে শেষ পর্যন্ত আর মাঠে ফেরেনি তারা। লিগের বাকি ম্যাচগুলোর সঙ্গে ২০১৫-১৬ মৌসুমের জন্যও নিষিদ্ধ করা হয় দলটিকে।

ফরাশগঞ্জের কাণ্ডটা বাদ দিলে লিগে খেলার মান ভালোই ছিল বলতে হবে। শেখ জামালকে খুব স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি শেখ রাসেল, মোহামেডান। বড় দলগুলোর লড়াইয়ে যথেষ্ট উত্তেজনার ঝাঁঝ ছিল। বিদেশী ফরোয়ার্ডদের একচ্ছত্র অধিপত্য কিছুটা হলেও খর্ব করেছেন মুক্তিযোদ্ধার এনামুল হক, মোহামেডানের জুয়েল রানা, শেখ রাসেলের জাহিদ হাসান এমিলি।

প্রাপ্তির ভেতরে এবারের লিগকে ঘিরে অবশ্য একটা আক্ষেপ থেকেই যাচ্ছে। ঢাকার বাইরের খেলায় দর্শক মোটামুটি ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ছিল মরুর মতো হাহাকার!