ভারতকে হারিয়ে সাফের শিরোপা বাংলাদেশের তরুণদের

ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের আনন্দে ভেসেছে বাংলাদেশের কিশোররা। টাইব্রেকারে ৪-২ গোলের এই জয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো স্বাগতিকরা।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরসিলেট থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2015, 01:33 PM
Updated : 18 August 2015, 04:25 PM

সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোছালো আক্রমণে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। মিডফিল্ডার মোহাম্মদ শাওনের ক্রস বক্সের জটলার মধ্যে পেয়ে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন ফাহিম মুর্শেদ।

৬৩তম মিনিটে অবিনাশের দূরপাল্লার শটে সমতায় ফেরে গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা। নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলের সমতায় শেষ হওয়ার পর সরাসরি টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচের ভাগ্য।

ফাহিম মুর্শেদ, জাহাঙ্গীর আলম, আতিকুজ্জামান ও সাদউদ্দিনের দারুণ সব শট গোলরক্ষককে বোকা বানায়। ভারতের অভিজিৎ সরকারের শট বারে লাগার পর মোহাম্মদ সাকলাইন খানের শট অসাধারণ দক্ষতায় গোলরক্ষক ফয়সাল আহমেদ রুখে দিতেই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।

সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার শুরুর দশ মিনিটে আক্রমণের চেয়ে বল পায়ে রাখাতেই মনোযোগী ছিল দুই দল। কিন্তু বৃষ্টিভেজা ভারী মাঠ কিছুটা পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় সেটাও কঠিন হয়ে পড়ে।

২৩তম মিনিটে ফাহিম মোর্শেদের দুর্বল শট অনায়াসে ফিরিয়ে দেন ভারতের গোলরক্ষক। অল্প সময়ের ব্যবধানে মিডফিল্ডার মোহাম্মদ শাওনের ক্রসে মুস্তাজিব হেড করলেও বল লক্ষ্যে থাকেনি। এরপর শাওনের দূরপাল্লার শট এবং হৃদয়ের বাঁ পায়ের দুর্বল শটও ঠিকানা খুঁজে পায়নি।

প্রথমার্ধের বাকিটা সময় লম্বা পাসে খেলা ভারতের আক্রমণগুলোর তাল মাঝ পথেই কেঁটে দিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে বাংলাদেশ। শেষ দিকে মুস্তাজিবের দূরপাল্লার শট গোলরক্ষক প্রভসুখান সিং রুখে দিলে আরও একবার হতাশ হতে হয় স্বাগতিকদের। আর ভারতের রাহিম আলি বক্সের মধ্যে বলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেই পোস্টের নিচে অলস সময় কাটানো গোলরক্ষক ফয়সাল আহমেদ গ্লাভসবন্দি করলে গোলশূন্যভাবে শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোছালো আক্রমণে এগিয়ে যায় গ্রুপ পর্বে ভারতকে ২-১ গোলে হারানো বাংলাদেশ। মিডফিল্ডার শাওনের ক্রস বক্সের জটলার মধ্যে পেয়ে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন ফাহিম।

এর কিছুক্ষণ পরই নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে একে একে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের ছিটকে দিয়ে বিপদসীমায় ঢুকে যান সেমি-ফাইনালে গোল পাওয়া সাদউদ্দিন। কিন্তু তার গতিহীন শট জমে যায় গোলরক্ষকের গ্লাভসে।

৫৯তম মিনিটে গোলরক্ষকের হাস্যকর এক ভুলে বিপদে পড়তে বসেছিল বাংলাদেশ। সতীর্থের ব্যাক পাস পায়ে রিসিভ করে হাতে তোলেন ফয়সাল। বক্সের মধ্যে পাওয়া ফ্রি-কিক থেকে ভারত গোল পেলেও অফসাইডের কারণে তা বাতিল হলে বড় বাঁচা বেঁচে যায় স্বাগতিকরা।

গোলরক্ষকের ভুলের মাশুল দিতে না হলেও তিন মিনিট পরই বাংলাদেশের হাসিটুকু উড়ে যায়। ৬২তম মিনিটে অময় অবিনাশের গোলে সমতায় ফেরে গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা। দারুণ দূরপাল্লার শটে লক্ষ্যভেদ করেন ভারতের এই মিডফিল্ডার।

সমতায় ফেরার পর নিজেদের ভালোভাবে গুছিয়ে নেয়া ভারত এগিয়ে যেতে পারেনি মোহাম্মদ শাহজানের শট পোস্টের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ায়। ৭৮তম মিনিটে বাংলাদেশ অধিনায়ক শাওনের থ্রো ধরে বক্সের মধ্যে পাওয়া বল ফাহিম বাইরে উড়িয়ে মারলে হতাশা নেমে আসে দর্শকে ঠাসা গ্যালারিতে।

যোগ করা সময়ের খেলা চলার সময় অন্ধকার নেমে আসে গ্যালারিতে। ১০ মিনিট পর বিদ্যুৎ এলে বন্ধ খেলা ফের শুরু হয়। মিনিটখানেক পরই ম্যাচ রেফারি নির্ধারিত সময় শেষের বাঁশি বাজালে টাইব্রেকারে গড়ায় শিরোপা লড়াই।

পেনাল্টি শুটআউটে প্রথম শট থেকে গোল করেন বাংলাদেশের ফাহিম মোর্শেদ। ভারতের সৌরভও প্রথম শট থেকে গোল পান। দ্বিতীয় শটে বাংলাদেশের গোলটি করেন জাহাঙ্গীর আলম সজীব, আর ভারতের মোহাম্মদ রাকিব।

তবে তৃতীয় শটে বাংলাদেশের আতিকুজ্জামান আতিক গোল পেলেও ব্যর্থ হন ভারতের অভিজিৎ সরকার। তার নেওয়া শটটি ডান পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

বাংলাদেশের চতুর্থ শটে নেওয়া সাদউদ্দিনও গোল করেন। ভারতের সাকলাইনের নেওয়া গড়ানো শট ডান দিকে ঝাপিয়ে ফয়সাল ঠেকিয়ে দিতেই শিরোপা ‍উৎসবে মাতে খেলোয়াড়-কর্মকর্তা-দর্শকরা।