খাদিজার সঙ্গে সেলফি: এক নেত্রীর ‘দুঃখ প্রকাশ’, আরেকজনের ক্ষোভ

সিলেটে ছাত্রলীগকর্মীর হামলায় সঙ্কটাপন্ন কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসকে দেখতে গিয়ে তোলা সেলফি ফেইসবুকে দিয়ে সমালোচিত যুব মহিলা লীগের তিন নেত্রীর মধ‌্যে একজন দুঃখ প্রকাশ করেছেন, আরেকজন প্রকাশ করেছেন ক্ষোভ।

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2016, 02:12 PM
Updated : 6 Oct 2016, 02:27 PM

খাদিজাকে দেখতে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে যান যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, যুগ্ম সম্পাদক কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি এবং সংগঠনের নেত্রী ও জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন।

হাসপাতালের আইসিইউতে তাদের তোলা একটি সেলফি তুহিন ফেইসবুকে শেয়ার করার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। ছবির নিচে মন্তব্যে অনেকেই তাদের এ আচরণের সমালোচনা করেন।

ওই সেলফির জন‌্য দুঃখ প্রকাশ করে কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি বৃহস্পতিবার ফেইসবুকে লেখেন, “অপু দিদি, তুহিনসহ আমার একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আসলে খাদিজাকে দেখতে যেয়ে তার অবস্থার কিছু তথ্য সবাইকে জানানোর অংশ হিসেবে যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি পোস্ট করা হয়েছিল।

“তবে ছবিটা দেখে অনেকেই ভুল বার্তা পেয়েছেন। অনেকে ছবিটি দেখে মর্মাহত হয়েছে.... আমি খুবই দুঃখিত! সবাই বিষয়টা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন; দয়া করে ভুল ব্যাখা দিবেন না। আমাদের উদ্দেশ্য আসলে সে রকম কিছু ছিল না।”

কোহেলীর দাবি, খাদিজার অবস্থা নিয়ে ‘গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল’ বলে এর জবাব দিতে ওই সেলফি তোলা হয়েছিল।

“আমরা চেষ্টা করেছিলাম মানুষকে তার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানানোর। কারণ খাদিজাকে নিয়ে নানা জায়গা থেকে গুজব ছড়াতে থাকে- খাদিজা মারা গেছেন এই বলে।”

গুরুতর আহত খাদিজার ‍সুস্থতা এবং হামলাকারী ‘সন্ত্রাসীর’ শাস্তিও দাবি করেছেন কোহেলী।

তিনি ‘দুঃখপ্রকাশ’ করলেও যুব মহিলা লীগের আরেক নেত্রী সাবিনা আক্তার তুহিন বুধবার রাতে ফেইসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিনি লেখেন, “আমদের ছবি নিয়ে যে মাতামাতি হচ্ছে, এতে মনে হচ্ছে খাদিজা ইস্যু রেখে আমরা মুখ্য হয়ে গেলাম; মনে হচ্ছে কত ক্ষতি করে ফেলেছি।”

নারী নির্যাতন বন্ধে সন্তানদের দিকে নজর দিতে অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন,  “পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে, এ ধরনের নারী নির্যাতন প্রায়ই হচ্ছে। এর জন্য সবার উচিত সন্তানদের প্রতি নজর দেয়া, ছেলে মেয়েরা কি করছে তা খেয়াল করা।”

নির্যাতিতদের পাশে না দাঁড়িয়ে ফেইসবুকে ‘মন্তব্য করে দায়িত্ব শেষ করার’ প্রবণতারও সমালোচনা করেন তুহিন।

“এখন সব কিছু সরকারের কাঁধে দিয়েই সবার দায়িত্ব যেন শেষ হয়ে যায়। বেডরুমে কিছু হলেও সরকারের দোষ।

“দেশে এত ধনী আছে কেউ দশ পয়সা দিয়ে সাহায্য করবে না, পাশে দাঁড়াবে (না), কেবল সরকারের তহবিলের প্রতি নির্ভরশীল হবে। আর কিছু হলে সরকারকে গালি দিয়ে কর্তব্য শেষ।”

সাহায্যের জন্য রাজনীতিবিদরাই ‘সবসময় হাত বাড়ায়’ মন্তব্য করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেরও সমালোচনা করেন এ সংসদ সদস্য।

“আমার ২১ দিনের বাচ্চা রেখে বেদম মেরে জেল খানায় পাঠায় তখন ধীক্কার জানানোর জন্য কেবল আওয়ামী লীগকেই পাই আর সুশীল সমাজ নাক ডেকে ঘুমান।”

ক্ষোভ প্রকাশের ওই স্ট‌্যাটাসের জন‌্য বৃহস্পতিবার দুঃখ প্রকাশ করে আরেকটি পোস্ট দেন এই সংসদ সদস‌্য; সেখানে ছিল সাংবাদিকদের প্রতি সমালোচনা।

“আমার স্ট্যাটাসে বদরুলের ফাঁসি চেয়ে নির্মম ঘটনার নিন্দা করে স্ট‌্যাটাস দেয়া হয়েছে ।আমার যদি ভুল হয়ে থাকে তবে আমি ক্ষমা পার্থী ।আমরা সব নির্যাতিত নারী সমাজের পাশে আছি থাকবো ।এটা দেয়া যদি আমার সাংবাদিক ভাইদের কাছে দৃষ্টিকটু হয়ে থাকে তবে আমি আন্তরিক দুঃখিত।”

এরপর তিনি লিখেছেন, “আসলে আমরা যারা রাজনীতি করি তাদের চিন্তা ভাবনায় যত সততা থাকুক আমাদের দোষ তো খুঁজে বের করতে হবে এটাই তো স্বাভাবিক। আমি মনে করি যা কিছু হয়েছে মঙ্গলের জন্য অনেক কিছু আবেগ থেকে না করে চিন্তা ভাবনা করে করতে হবে ।

“আমি সাংবাদিক পরিবারের মানুষ আমার তো জানা উচিত ছিল খবরের শিরনাম তো উনারা খুঁজবে আমি কেন রসদ দিবো আবেগ দিয়ে বিবেচনা না করে মাথা খাটিয়ে চলতে হবে । কেউ যদি কাজ করে সমালোচনা তারই বেশি হয়।”

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম সোমবার এমসি কলেজে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে খাদিজাকে।

সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রীর অবস্থা এখনও সঙ্কটাপন্ন বলে স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।