ভোটের দুই দিন পর মঙ্গলবার রাত ১১টায়ও নির্বাচন কমিশন সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
কবে গেজেট প্রকাশ করা হবে জানতে চাইলে একজন নির্বাচন কমিশনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি তো থাকছে। কাল (বুধবার) গেজেট করা হবে। প্রেসে পাঠানোর চেষ্টা করব।”
ইসিতে গেজেট প্রকাশের প্রস্তুতির মধ্যে রাত ৯টায় কমিশনারদের নিয়ে বৈঠক করেন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।
এদিকে নির্বাচনের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করেন। নির্বাচন এবং এর পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
চলতি নবম জাতীয় সংসদ কবে ভাঙ্গবে বা নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে- জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয় নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পর।”
সংসদ নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে শপথের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকতে হবে। তবে ভোটের কত দিন পর গেজেট হবে, সেই বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
তবে সংসদ ভেঙ্গে গেলে সেই জটিলতা এড়ানো যায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ২৪ জানুয়ারির আগে গেজেট হলে ‘জটিলতা’র বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পরামর্শ দেয়া হয়নি বলে জানান ওই নির্বাচন কমিশনার।
“এ বিষয়ে কেউ তো আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি। আমরা গেজেট করব, অন্য বিষয় তো আর জানি না।”
২৪ জানুয়ারি সংসদ ভেঙে যাওয়ার আগে দশম সংসদে নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশ, শপথ, সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন, সরকার গঠন, সংসদ বহালসহ বিষয়ে কয়েকটি বিষয়ে প্রথম অভিজ্ঞতায় ‘জটিলতা’ দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইসির প্রস্তুতি থাকলেও সরকারের সিদ্ধান্তের ওপরই গেজেটের বিষয়টি নির্ভর করবে বলে মনে করেন তারা।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিশ্চয়ই গেজেট প্রকাশের আগে আইনি দিকগুলো দেখবে ইসি। এ বিষয়গুলোতে নিশ্চয়ই আইন বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা থাকবে।”
‘একেবারেই ভিন্ন পরিস্থিতি’
নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নাম ও ঠিকানাসহ গেজেট প্রকাশের তিনদিনের মধ্যে শপথ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আইনি ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত।
নবম সংসদ নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, “দ্রুত গেজেট করে শপথ হলে দুই সাংসদ এক আসনে থাকবে।”
তিনি জানান, নবম সংসদে ২৯ ডিসেম্বর ভোট শেষে ১ জানুয়ারি গেজেট হয়।
“কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। একই আসনে একজন সংসদ সদস্য বহাল রয়েছে, আরেকজন ওই আসনে নতুন নির্বাচিত হয়েছে।”
সংশ্লিষ্টরা জানান, সংসদ ভেঙে গেলেও প্রধানমন্ত্রী সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের দলের প্রধান হিসেবে শপথ নিয়ে ধারবাহিকতা রক্ষা করতে পারবেন। তত্ত্বাবধায়ক বা অন্য সময়ে ভোটের পর সরকার গঠন পর্যন্ত তা রাষ্ট্রপতিই দেখেন।
গেজেট প্রকাশের প্রস্তুতি চললেও নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ সাদিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। ভোটের পরে কবে গেজেট করতে হবে সে বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। যখন ইসি বলবে, তখনি নির্বাচিতদের গেজেট করা হবে।”
ভোটের দু’দিন পার হলেও সব আসনের চূড়ান্ত ফলাফল মঙ্গলবার পর্যন্ত ইসিতে পৌঁছেনি বলে জানান ইসি সচিব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন নেতা মঙ্গলবার বিকালে ইসি সচিবের সঙ্গে দেখা করেন।
আইনি জটিলতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি বলার কেউ নই। এসব নীতিনির্ধারণী মহলের সিদ্ধান্ত। তবে নিশ্চয়ই সবকিছু ভাবনায় রাখা হচ্ছে।”
নতুন-পুরনো শতাধিক প্রার্থী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর-৬ আসনে দশম সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন। ওই আসনে নবম সংসদের উপ নির্বাচনে জয়ী আবুল কালাম আজাদ রয়েছেন।
ফেনী-১ আসনে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সাংসদ, দশম সংসদে ওই আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন জাসদের শিরীন আকতার।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকা-১৭ আসনের সাংসদ, এবার ওই আসনে বিএনএফ প্রধান আবুল কালাম আজাদ নির্বাচিত হয়েছেন।
সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হওয়ায় দশম সংসদে শতাধিক আসনে নবম সংসদের সাংসদরা রয়েছেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, দশম সংসদ নির্বাচনে [বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ভোটে] ২৯২ জন ইতোমধ্যে নির্বাচিত হয়েছে।
এর মধ্যে নতুন ১২৩ জন (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৫৮ ও ভোটে ৬৫) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। সংসদ সদস্য পদে থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ১৬৯ জন।
বাকি আটটি আসনে পুনভোট হবে ১৬ জানুয়ারি।