ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েব অভজারভেটরির (এলআইজিও-লাইগো) গবেষকরা বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ব্ল্যাক হোলে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ) শনাক্ত করার যুগান্তকারী ওই ঘোষণা দেন।
জার্মান পদার্থবিদ আইনস্টাইন ১৯১৫ সালে তার সাধারণ অপেক্ষবাদ তত্ত্বে এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ধারণা দেন, যা স্থান-কালকে বাঁকিয়ে দেয়।
এই তরঙ্গ শনাক্ত করা সম্ভব কি না- সে বিষয়ে ১৯৭০ এর দশকেও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ছিলেন না। আবার অনেক তাত্ত্বিক সেসব দিনে ওই তরঙ্গের অস্তিত্বই খারিজ করে দিতেন।
অ্যাস্ট্রোনমি ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধ বলছে, আইনস্টাইন নিজেও এক সময় ওই তত্ত্ব ‘ভুল’ বলে ভাবতে শুরু করেছিলেন।
১৯৩৬ সালে বন্ধু ম্যাক্স বর্নকে এক চিঠিতে আইনস্টাইন লেখেন, “এক তরুণ সহযোগীর সঙ্গে মিলে আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, আসলে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের অস্তিত্ব নেই, যদিও প্রথমবার আমার মনে হয়েছিল অস্তিত্ব আছে।”
সিদ্ধান্তে এই পরিবর্তনের বিষয়ে জানাতে এরপর ‘ফিজিকাল রিভিউ লেটার্স’ জার্নালে একটি নিবন্ধ জমা দেন আইনস্টাইন। এর শিরোনাম ছিল “মহাকর্ষীয় তরঙ্গের অস্তিত্ব আছে?”
কিন্তু ওই নিবন্ধ রিভিউ করার দায়িত্ব যিনি পেয়েছিলেন, তিনি নতুন গাণিতিক বিন্যাসে অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়ায় তা আইনস্টাইনকে পর্যালোচনার জন্য ফেরত পাঠানো হয়।
এই আচরণে বিরক্ত আইনস্টাইন ফিজিকাল রিভিউ লেটার্সকে বলেন, তার লেখা প্রকাশ হওয়ার আগে কোনো বিশেষজ্ঞকে দেখানোর অনুমতি তিনি তাদের দেননি। ফিজিকাল রিভিউ লেটার্সে আর কোনো লেখা তিনি দেবেন না।
পরে তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত ফ্রাঙ্কলিন ইন্সটিটিউটের জার্নালে সেই নিবন্ধ যখন প্রকাশিত হলো, তখন দেখা গেল আইনস্টাইনের দ্বিধা কেটে গেছে। সেই লেখা শেষ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছিল ‘অন গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভস’ শিরোনামে।
আর্কাইভের তথ্য ঘেটে ভেতরের গল্পটি বের করে এনেছে ‘ফিজিক্স টুডে’ ম্যাগাজিন।
অ্যাস্ট্রোনমি ম্যাগাজিন লিখেছে, ওই ঘটনায় ভুল মেনে নিতে আইনস্টাইনকে খুব একটা আগ্রহী মনে না হলেও তিনি নিজেকে ‘ভুলের ঊর্ধ্বে’ ভাবতেন না।
ইনফিল্ড একবার বলেছিলেন, একসঙ্গে কাজ করার সময় তিনি সব সময় বাড়তি সতর্ক থাকতেন, কারণ সেসব গবেষণাপত্রে আইনস্টাইনের নাম যাবে।
উত্তরে আইনস্টাইন বলেন, “তোমার অতো সতর্ক হওয়ার দরকার নেই। আমার নামেও ভুল লেখা বাজারে আছে।”
লাইগোর গবেষণাপত্রটি রিভিউ শেষে প্রকাশিত হওয়ার পর বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হলেন, ১৯১৬ সালে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ নিয়ে প্রকাশিত নিবন্ধটি ‘সেই ভুলগুলোর’ একটি নয়।