কে আসল, কে নকল?

যমজ ভাই কিংবা বোন হওয়ার নজির পৃথিবীতে অহরহই আছে। তাদের আচার-আচরণে ভিন্নতাও থাকে। কিন্তু এই ছবিগুলোর মানুষ জমজ কেউ নয়। এবার বলুন তো এদের মধ্যে কে আসল কে নকল?

এস এম নাদিম মাহমুদ, জাপান থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2015, 03:43 PM
Updated : 20 Sept 2015, 03:43 PM

হ্যাঁ, বোকা বানানো এসব ছবির একজন করে মানুষ হলেও অন্যটি রোবট। মানব আকৃতির এসব রোবট তৈরি করে সমগ্র বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিরোশি ইসুগুরু।

গত এক দশক ধরে মানুষের অবয়বে রোবট তৈরি করে আসলেও সম্প্রতি তিনি তার নিজের ও তার পরিবারের সদস্যদের রোবটায়ন করেছেন। যেগুলো শুনছে নির্দেশনা, বলছে কথাও।

বিশ্বের অন্যতম প্রধান এই রোবট বিজ্ঞানী ‘বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’কে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন রোবটের বর্তমান ও ভবিষৎ পরিকল্পনার কথা। বলেছেন, তার আবিস্কারের কথা।

ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের `ইন্টেলিজেন্ট রোবটিক ল্যাবরাটরি'র পরিচালক অধ্যাপক ইসুগুরু ২০০১ সালে রেপ্লি কিউ১ দিয়ে প্রথমে মানব আকৃতির রোবট তৈরি করেন।

ওই সময় রেপ্লি কিউ১ ছিল তার মেয়ের অবয়বে। এরপর তিনি ২০০৫ সালে রেপ্লি কিউ১এক্স নামে একটি পরিপূর্ণ নারীকে সামনে নিয়ে আসেন। কিন্তু এসব রোবট কাজ করতে পারলেও কথা বলতে পারত না।

কথা বলার জন্য তিনি শুরু করলেন ইন্টেলিজেন্স রোবাটিক মেকানিক্স নামে একটি প্রকল্প। মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানোর যন্ত্র কৌশল নিয়ে আসার জন্য তিনি নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যান।কয়েক বছর পর অ্যান্ড্রয়েড প্রযুক্তির সূচনা হলে তার কাজের মাত্রা একধাপ বেড়ে যায়। শুরু হয় রোবটকে কথা বলানো।

৪৬ বছর বয়সী এই অধ্যাপক কয়েক ডজন রোবট তৈরি করেন। সিলিকন রাবার আর শক্তিশালী ত্বড়িৎ কৌশলকে কাজে লাগিয়ে স্ত্রীকে হুবুহু রোবটের রূপদান করেন। আর এই রোবটই তার ঘরে স্ত্রীর মতো আচরণ করে বলে জানান তিনি।

কালো চশমা ও কালো পোশাকের ভক্ত এ অধ্যাপক গত বছরের শুরুতে নিজের অবয়বে আরো একটি রোবট তৈরি করেন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার গবেষণার উদ্দেশ্যই হল মানুষ কি? মানুষের প্রয়োজনীয়তা এই পৃথিবীতে কতটুকু?”

আসলে বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হল, মানুষের গুণাবলী প্রযুক্তিতে কাজে লাগানো। মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে শাণিত করা। আর এজন্য আমি আমার নিজের আকৃতির এই রোবট তৈরি করেছি। এটি একটি যুগান্তকরী আবিস্কার। এ রোবট আমার মতো কথা বলে। আমার নির্দেশণা মেনে চলে।

এখানে মানুষের প্রাকৃতিক আচরণ ও চলাফেরার কৌশল কাজে লাগিয়ে যান্ত্রিক কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।

মানব আকৃতি ও কথা বলা রোবটগুলোকে তিনি ‘জিমনয়েড’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। জিমনয়েড-এফ নামের এক নারী রোবটকে তিনি দেখিয়েছেন ‘ নারী সঙ্গী হিসেবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, এই নারী রোবট আর এক নারীর অবয়বের ‘অনুলিপি’ করা হয়েছে।

জাপানি ভাষায় তাদের মধ্যে কথাকপোথনে দেখা যায়, ওই নারী তার রোবটিক সদস্যের সাথে কুশল বিনিময় করছে। প্রত্যুত্তরে রোবটও তার জবাব দিচ্ছে। সেন্সর ও কম্পিউটারে নিয়ন্ত্রণ করা হয় কথা বলার কৌশল।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমার তৈরি রোবট হাসপাতালে ডাক্তারের হয়ে চিকিৎসা দিচ্ছে, ক্লাসে পড়াচ্ছে, রেস্টুরেন্টে বিকিকিনি করছে। এটি রোবট প্রজন্মের জন্য বড় অর্জন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এছাড়াও তিনি আরো বলেন, ধরুন আপনি অনেক ব্যস্ত। আপনাকে এক সাথে তিন জায়গায় উপস্থিত থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনি কি করবেন? আর এই সমাধানের জন্য আমি নিজ আকৃতির রোবট তৈরিতে এগিয়ে যাচ্ছি। আপনি উপস্থিত হতে না পারলেও যেন আপনার অস্তিত্ব সেখানে থাকে সেজন্য আমাদের এ পদক্ষেপ।

আমি বিশ্বাস করি আগামী ৪/৫ বছর পর পৃথিবীর অনেকাংশ কাজ রোবটের দখলে যাবে।

তার গবেষণার অনুসরণে সম্প্রতি হলিউডে ‘এক্স মাসিনিয়া’ নামক একটি সিনেমা তৈরি করা হয়েছে। যেটি জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছে।

জাপানের ‘রোবাটিক সোসাইটি’র প্রতিষ্ঠা এই বিজ্ঞানীর সাথে কাজ করছে নাসা, ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’ (এমআইটি), টয়োটা মোটরস, জাপানের এমইটিআই, সনি কোম্পানি।

রোবটকে নিজস্বভাবে কথা বলানোর জন্য তার গবেষণা কেন্দ্রে চারটি গ্রুপে প্রায় পঞ্চাশজন গবেষক ও শিক্ষার্থী কাজ করছে।

তিনি বলেন, আমাদের মস্তিস্ক অন্যান্যদের চেয়ে আলাদা হওয়ায় আমরা বর্তমানে রোবটকে টেলিকমিউনিকশনের মাধ্যমে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছি।

তার নিজ আকৃতির জিমনয়েড এইচআই-৪ ( ল্যাটিন জিমিনাস যার অর্থ জমজ) প্রসঙ্গে বলেন, এটি আমার সব ধরনের আচরণ অনুসরণ করতে পারে। আমি যখন ল্যাবে অনুপস্থিত থাকি, তখন ল্যাব দেখাশুনার দায়িত্ব তাকে দিই। কম্পিউটারে কিছু বিশেষ প্রোগাম কাজে লাগিয়ে আমার এই ক্লোন রোবট নির্দেশনা দিতে পারে।

রোবটই বিশ্বে মানুষের শান্তির বার্তা এনে দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে বহুমুখী ব্যবহার শুরু হলেও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মানুষ পুরাপুরি রোবট নির্ভর হয়ে পড়বে।