আড়মোড়া ভাঙছে পাহাড়ের পর্যটন

টানা সাড়ে চার মাস অবরুদ্ধতার আড়মোড়া ভেঙে ফের জাগছে পাহাড়ের পর্যটন।

ফজলে এলাহী রাঙামাটি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2020, 06:51 PM
Updated : 4 August 2020, 06:51 PM

স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন সাপেক্ষে সোমবার ‘পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স’ পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানান রাঙামাটি পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত ১৮ মার্চ পর্যটকদের এই সরকারি রিজোর্ট বন্ধ করা হয়েছিল।

জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই খুলতে শুরু করেছিল রাঙামাটি জেলা শহরের হোটেল মোটেলগুলো। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছিল না। তাই কার্যত বন্ধই ছিল জেলার প্রধান পর্যটন কেন্দ্র ‘পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স’।

কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেই ঘরের বাইরে আসতে শুরু করেছে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। ইতিমধ্যে রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলোর উদ্দেশ্যে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন।

সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সরকারি নির্দেশনায় গত ১৮ মার্চ বন্ধ করা হয়েছিল পর্যটন কেন্দ্র। সোমবার থেকে সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। কারণ ইতোমধ্যেই কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ অনেক জায়গায় পর্যটন কেন্দ্র চালু হয়েছে।”

গত সাড়ে চার মাসে রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আপাতত এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে একটি স্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টিই আমাদের লক্ষ্য।”

তিনি বলেন, এখন ঠিক কী পরিমাণ পর্যটক আসবেন, অথবা আদৌ আসবেন কিনা সেটা বোঝা যাবে আগামী কয়েকদিনের পরিস্থিতিতে। মাস্ক ছাড়া কাউকে পর্যটন কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ বলেন, “পর্যটনের ব্যবস্থাপক আমার কাছে এসেছিলেন। আমি বলেছি, আপনারা যদি মনে করেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালাবেন, তবে সীমিত পরিসরে চালাতে পারেন। সেই মোতাবেক তারা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি, কেউ যেন মাস্ক ছাড়া সেখানে না যায় এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়।”

এদিকে, জুলাই মাসেই সীমিত পর্যায়ে খুলে দেওয়া রাঙামাটির আবাসিক হোটেল-মোটেলগুলোর অবস্থা বেশ নাজুক। টানা সাড়ে তিন মাসের বেশি বন্ধ থাকার পর জুলাই মাসের দ্বিতীয়ার্ধে খুলে দেওয়া হলেও প্রত্যাশিত বোর্ডার না পাওয়ায় ফের বন্ধ হওয়ার পথে বেশ কয়েকটি হোটেল-মোটেল। শহরের ৪৫টির মতো হোটেল-মোটেলের একই অবস্থা।

রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দিন সেলিম বলেন, “শহরে প্রায় ৪৫টি আবাসিক হোটেল-মোটেল আছে। এর প্রায় সবগুলোর অবস্থাই নাজুক। আমরা কোভিড-১৯ এর প্রথম সাড়ে তিন মাসে প্রায় আড়াই কোটি টাকা লোকসান গুনেছি। জুলাই মাসের শেষ প্রান্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলেও খুব একটা লাভ হয়নি। বরং দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পরিচ্ছন্নতার কাজে যে টাকা খরচ হয়েছে সেই টাকাও উঠেনি এখনও অনেকের।”

আবাসিক হোটেল মালিকদের এই নেতা জেলার পর্যটন খাতকে বাঁচাতে সরকারি সহায়তা কামনা করে বলেন, “এই ক্রান্তিকালে যদি আমরা সরকারি প্রণোদনা বা ঋণ পেতাম তাহলে হয়ত কিছুটা হলেও বাঁচার চেষ্টা করতে পারতাম।”

এদিকে, কাপ্তাই হ্রদে পর্যটকদের বহনকারী ট্যুরিস্ট বোটগুলোর চালকরা দীর্ঘ দুঃসহ কাটিয়ে সোমবার বিকাল থেকে যেন হাফ ছেড়ে স্বস্তির আশা করছেন। সোমবার বিকালে পর্যটন নৌঘাটে গিয়ে দেখা মেলে চালক লোকমানের।

লোকমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত সাড়ে চার মাস কীভাবে যে বেঁচে আছি, সেটা শুধু আমরাই জানি। আজ সকাল থেকে কিছু কিছু ট্যুরিস্ট আসছে; পঁচিশটির মতো বোট ছেড়ে গেছে ঘাট থেকে। এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তবে হয়ত কিছুটা স্বস্তি মিলবে।”

পর্যটন নৌঘাটের ব্যবস্থাপক রমজান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বছরে দুইবার দুই ঈদের সময় আমাদের সবচেয়ে ভালো ব্যবসা হয়। এবার তার কিছুই হলো না। বরং গত কয়েকটা মাস জীবনের অন্য চেহারাই দেখেছি আমরা। এখন যদি সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং পর্যটকরা আসতে শুরু করেন তবেই হয়ত আমাদের দরিদ্র বোট চালকরা বেঁচে থাকতে পারবেন।”

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক শরীফ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত কয়েকটা মাস জাস্ট অবরুদ্ধই ছিলাম, যেনো কারাবন্দী জীবন। একটু সুযোগ পেয়েই সপরিবারে ছুটে এলাম পাহাড়ের কাছে। কিছুটা হলেও স্বস্তি লাগছে। তবে এটাও ঠিক যে ভয় তো কাজ করেই মনে। কিন্তু সবাই যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি তাহলে হয়ত এই ভয়টা থাকবে না।”

রাঙামাটির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সাজেকে গত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে শখানেক কটেজ, রিজোর্ট ও আবাসিক হোটেল। সবকিছুই বন্ধ আছে গত মার্চ মাস থেকেই। এগুলো কবে চালু করা হবে জানে না কেউই।

সাজেকে ‘নীলপাহাড়’ ও ‘মর্নিস্টার’ নামের দুটি রিজোর্টের মালিক আলফ্রেড লুসাই।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানকার সবগুলো রিজোর্টই এখনও বন্ধ। কবে চালু হবে আমরা জানি না। এখানকার অবস্থা দুঃসহ। আমরা কর্মচারী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। কী করব কিছুই জানি না।”

প্রতিবছরই বিপুল সংখ্যক দেশি পর্যটকের পদভারে মুখর হয় পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। শহর ছাড়িয়ে দূরের সাজেক পর্যন্ত পর্যটকের আনাগোনা থাকে নিয়মিত। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীর প্রকোপে থমকে গেছে বিনোদন আর  ভ্রমণ। এ থেকে কবে মুক্তি মিলবে কেউ জানে না।