গোপালগঞ্জে মণ্ডপে মণ্ডপে মহামায়া বরণের প্রস্তুতি  

কৈলাস থেকে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে এসেছেন ‘দুর্গতিনাশিনী’; এবার দেবীকে বরণ করতে গোপালগঞ্জের মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রস্তুতি। ষষ্টীপূজা থেকে পাঁচদিন ভক্তের আরাধনায় সিক্ত হয়ে বিজয়াতে দুর্গা আবার ফিরে যাবেন শ্বশুরালয়ে।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2017, 09:13 AM
Updated : 21 Sept 2017, 09:57 AM

দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে গোপালগঞ্জের পাঁচ উপজেলার ১১৭২ মণ্ডপে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে বলে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অসিত মল্লিক জানান।

সরেজমিনে দেখা গেছে দেবীর রূপকে ফুটিয়ে তুলতে এখন চলছে রঙের কাজ। ভাস্করেরা নিপুণ হাতে প্রতিমাকে সাজাচ্ছেন। পাশাপাশি মণ্ডপগুলোতে চলছে প্যান্ডেল, আলোকসজ্জা আর শোভা বর্ধনের কাজ।

অসিত বলেন, এ বছর গোপালগঞ্জের সদর উপজেলায় ৩১৪টি, কোটালীপাড়ায় ২৭৩টি, মুকসুদপুর উপজেলায় ২৬৬টি, কাশিয়ানী উপজেলায় ২৩৮টি এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৮১টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন চলছে।

গোপালগঞ্জ বাজার সার্বজনীন কালিবাড়ির পুরোহিত দিপঙ্কর চক্রবর্ত্তী বলেন, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গা পূজার মূল আনুষ্ঠিকতা শুরু হবে; চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

এ বছর দেবী নৌকায় চড়ে পৃথিবীতে আসবেন আবার ঘোড়ায় চড়ে কৈলাশে ফিরবেন বলে জানান তিনি।

পূজার আর মাত্র কয়েকদিন হাতে থাকায় একেবারেই ফুরসত মিলছে না মৃৎশিল্পীরা। ষষ্ঠীর আগেই দুর্গাকে পুরো রূপ দিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

মৃৎশিল্পী অজিৎ পাল ও জুয়েল পাল বলেন, তারা এ বছর ১৮টি মন্দিরে প্রতিমা তৈরি করেছেন। এখন রং এর কাজ করছেন। এ পর্যন্ত ১০টি মন্দিরের প্রতিমার রং করেছেন। আরও আটটি প্রতিমায় রংএর কাজ বাকি আছে।

কোটালীপাড়া উপজেলার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সিদ্ধান্ত খোলা পূজা মণ্ডপের পূজারী গৌরাঙ্গ লাল দাস বলেন, “আমাদের মন্দিরের প্রতিমার রঙের কাজ শেষ হয়েছে। এখন প্যান্ডেল, আলোকসজ্জা ও মন্দিরের সাজসজ্জার কাজ চলছে।”

পূজা উদযাপন পরিষদ কোটালীপাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নারয়ণ চন্দ্র দাস বলেন, দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে প্রতিটি মন্দিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আইন-শৃংখলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যরা আগের বছর গুলো মতো এ বছরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জেলা পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম হাজরা মন্নু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিজ জেলা ও নির্বাচনী এলাকায় দুর্গোৎসব নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসন, পুলিশ ও মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার মন্দিরগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অনুদানের টাকা আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে টাকাগুলো হস্তান্তর করা হবে।

জেলার মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে উল্লেখ করে গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহম্মদ সাঈদুর রহমান খান বলেন, উৎসব নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের সঙ্গে আনসার সদস্য ও পূজা উদযাপন কমিটি কাজ করবে।

তিথি অনুযায়ী, ২৬ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীতে দুর্গার বোধনের মাধ্যমে শুরু হবে মূল পূজা। ৩০ সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বির্সজনের মধ্যে দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হবে। এই পাঁচদিন শহর, গ্রাম পাড়া-মহল্লা ঢাকের আওয়াজ,উলুধ্বনি আর আরতিতে মুখরিত হবে। 

মহালয়ার প্রাক সন্ধ্যায় অর্থাৎ শুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে কাত্যায়নী মুনির কন্যা রূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে বলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস।