রোববার রাঙামাটি শহরে চাকমা রাজবাড়িতে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “মিয়ানমার বা বার্মার রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে কয়েক লক্ষ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ ও শিশুর মর্মান্তিক অবস্থায় আগমনে চাকমা সার্কেলের অধিবাসীগণ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানকে সমর্থন জানান চাকমা সার্কেল প্রধান দেবাশীষ।
গত ২৪ অগাস্ট রাখাইন রাজ্যে পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে হামলার পর শুরু হওয়া ওই সেনা অভিযানে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক হারে হত্যা-ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
ইতোমধ্যে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশে।
শরণার্থীদেরকে নিজ নিজ গ্রামে সম্মানজনকভাবে, নিরাপদে ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান সাপেক্ষে প্রত্যাবর্তনের জন্য দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান দেবাশীষ রায়।
“তবে যতদিন পর্যন্ত তা সম্ভবপর না হয়, তাদেরকে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে যথাযথ আশ্রয় প্রদান করা বাংলাদেশ সরকারের এবং দেশের মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।”
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বেসরকারি সংগঠনের কাছে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দিতে দেশের নাগরিক ও আন্তর্জাতিক মহলকে আহ্বান জানান ব্যারিস্টার দেবাশীষ।
‘শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও সার্বিক কল্যাণ’ এবং ‘বাংলাদেশ ও তার নাগরিকদের কল্যাণে’ শরণার্থীদের বসবাস নির্দিষ্ট শিবিরেই সীমাবদ্ধ রাখতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
শরণার্থীদের প্রতি তাদের স্বদেশে অত্যাচার ও বাংলাদেশে তাদের আগমনকে ঘিরে নানা প্রচার, অপপ্রচার, গুজব এবং সীমিত পর্যায়ের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে কর্মরত বা বসবাসরত পার্বত্য চট্টগ্রামের একাধিক পাহাড়ি ব্যক্তি তাদের জাতিগত বা ধর্মগত পরিচয়ের কারণে কটাক্ষ উক্তি, হুমকিসহ অন্যান্য অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের শিকার হয়েছেন বলেও দাবি করে তিনি এর নিন্দা জানান।
মিয়ানমারের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং শরণার্থীদের বেশিরভাগ মুসলিম ধর্মাবলম্বী হওয়ায় বিষয়টাকে ‘ধর্মগত সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব’ হিসেবে ‘কোনো কোনো মহল অপব্যাখ্যা’ করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
“এসবের অসংযত বহিঃপ্রকাশের ফলে সাম্প্রদায়িকতা বেড়ে যাচ্ছে এবং অহেতুকভাবে দেশের বৌদ্ধদেরকে রাখাইন রাজ্যের মুসলমানদের নিপীড়নের জন্য দায়ী করা হচ্ছে।
“তবে বাস্তবে দেখা যায় যে মিয়ানমার সরকারের হাতে, বিশেষ করে সামরিক শাসনামলে নিপীড়নের শিকার হয়েছে শুধু অ-বৌদ্ধ সম্প্রদায় নয়; বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী শ্যান, রাখাইন, মোন, ক্যারেনসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নর-নারীও।”
রোহিঙ্গাদের কোনো অংশের কোনো রকমের সশস্ত্র ও অন্যান্য হিংসাত্মক কার্যকলাপ বাংলাদেশে বা বার্মার মাটিতে যাতে সংঘটিত হতে না পারে সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান চাকমা প্রধান।
চাকমা সার্কেল প্রধানের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাঙামাটির পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাঙামাটিতে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেনি। একজন রোহিঙ্গা রাঙামাটিতে আসার খবর পেয়ে দ্রুত তাকে রিকভার করে আবার কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে ফেরত পাঠানো হয়েছে।”
রোহিঙ্গারা যেন রাঙামাটিতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য শহরের ছয়টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বলে জানান তিনি।