ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বিএনপির ত্রাণ বিতরণে বাধা: জেলা প্রশাসন

সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ‘ত্রাণ সহায়তা কেন্দ্রের’ সঙ্গে সমন্বয় না করায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিএনপির ত্রাণ বিতরণ আটকে দেওয়া হয় বলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। 

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2017, 04:20 PM
Updated : 14 Sept 2017, 04:40 PM

বৃহস্পতিবার ‘রোহিঙ্গা পরিস্থিতি’ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন এ কথা জানান।

এদিকে, বৃহস্পতিবারও বিতরণ করতে না পারায় ত্রাণ সামগ্রীগুলো ট্রাক থেকে নামিয়ে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।

বুধবার বিকালে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে উখিয়া যাওয়ার পথে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে কক্সবাজারে আটকে দেওয়া হয়। 

বৃহস্পতিবার উখিয়ায় ত্রাণ বিতরণ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

বিএনপির পক্ষ থেকে ত্রাণবাহী ২০ ট্রাক আটকে দেওয়ার কথা বলা হলেও জেলা প্রশাসক ‘১৪’ ট্রাক বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের দেওয়ার জন্য বিএনপির ১৪ ট্রাক ত্রাণ সহায়তা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত না করায় আটকে দেওয়া হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসন আরও বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সব রোহিঙ্গাদের এখনও ত্রাণের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তাই ত্রাণ দিতে আসা বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে জেলা প্রশাসনের চালু করা ‘ত্রাণ সহায়তা কেন্দ্রের’ মাধ্যমে সমন্বয় করে বিতরণের জন্য বলা হয়েছিল।

“ত্রাণ বিতরণে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

“কিন্তু বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিষয়টি অবহিত করার পরও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় না করে ত্রাণগুলো বিতরণের জন্য নিয়ে যেতে চাইলে আটকে দেওয়া হয়।”

বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের নিয়ে আসা মানবিক সহায়তাগুলো বিতরণে বিশৃংখলা এড়াতে ‘ত্রাণ সহায়তা কেন্দ্র’ চালু করা হয় বলে জেলা প্রশাসক জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে দেওয়া ছাড়াও রোহিঙ্গা পরিস্থিতির সার্বিক বিষয়াদি তুলে ধরেন জেলা প্রশাসক আলী হোসেন।

এদিকে, বিতরণ করতে না পারা ত্রাণ সামগ্রী দ্বিতীয় দিনও বিতরণ করা সম্ভব হয়নি বলেন জেলা বিএনপি সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী।

তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবারও ত্রাণগুলো বিতরণের জন্য নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রশাসন বাধা দেওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। তাই ত্রাণ সামগ্রীগুলো ট্রাক থেকে খালাস করে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।”

গত ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকিতে হামলার ঘটনার পর থেকে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ আশ্রয় নেয়।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ( আইওএম ) বুধবার অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৯ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছিল।

‘সবাইকে ত্রাণের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি’

রোহিঙ্গাদের সবাইকে এখনও ত্রাণের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি বলে জেলা প্রশাসক আলী হোসেন জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, তবে প্রশাসন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিগগিরই সবাইকে ত্রাণের আওতায় নিয়ে আসতে পারবে। এ লক্ষ্যে সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজ চলছে।

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা দিতে প্রশাসন ছাড়াও কাজ করছে আইওএম সহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা। ইতিমধ্যে এসব রোহিঙ্গাদের জন্য শেড নির্মাণ ছাড়াও মেডিকেশন, স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখনও তা পর্যাপ্ত নয়।”

তবে দ্রুততার সঙ্গে এসব বিষয়ে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান আলী হোসেন।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের তথ্য-উপাত্তসহ নিবন্ধনের পাশাপাশি পরিচয়পত্র সরবরাহ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করছি, আগামী এক মাসের মধ্যে তা শেষ করা সম্ভব হবে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি ছাড়াও জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণের চাহিদার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক ) আনোয়ারুল নাছের ও পুলিশ সুপার এ কে এম ইকবাল হোসেনসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের প্রেক্ষিতে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি বিষয়ে এসপি এ কে এম ইকবাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে না পারে পুলিশ প্রশাসন এ ব্যাপারে কড়া সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারীসহ পুলিশের টহল জোরদার।

আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলার বাইরের থেকে তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য ও ৬০ জন কর্মকর্তা আনা হয়েছে। এছাড়া সার্বক্ষণিকভাবে ১২টি ভ্রাম্যমাণ টহলদল কাজ করছে বলেও তিনি জানান।