নওগাঁয় চোর অপবাদে কিশোরকে নির্যাতন, গ্রেপ্তার ১

নওগাঁর রাণীনগরে চোর সন্দেহে দুদিন আটকে রেখে এক কিশোরকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তাদের প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে।

নওগাঁ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2017, 05:30 PM
Updated : 27 August 2017, 05:30 PM

নির্যাতনের শিকার শরিফুল ইসলাম (১৪) রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা প্রবাসী জামাল উদ্দিন আকন্দের ছেলে। তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শরিফুলের পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঘটনার দিন শুক্রবার রাতে থানার এক এসআই ঘটনাস্থলে গেলেও শরিফুলকে উদ্ধার না করে থানায় ফিরে যান। পরদিন শনিবার তাকে উদ্ধার করা হয়।

তবে পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এ ঘটনায় শরিফুলের মা আয়েশা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আব্দুল খালেককে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

মামলার বিবরণে বলা হয়, শুক্রবার দুপুরে শরিফুলকে প্রতিবেশী আব্দুল খালেক কাজ আছে বলে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে হাজী আক্কাস আলী, তার ছেলে জিয়ারুল ও টিপুকে বাড়িতে ডেকে নেয় খালেক। পরে খালেক টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে শরিফুলকে লাঠি দিয়ে পেটান। এরপর গলায় গামছা পেঁচিয়ে ৪-৫ মিনিট ধরে টানা-হেঁচড়া করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, শরিফুলের দুই হাত পিছমোড়া দিয়ে বেঁধে চারজন মিলে লাঠি দিয়ে পেটায়। চিৎকার করলে তারা শরিফুলকে বাড়ির পাশের একটি জঙ্গলের ধারে নিয়ে আবার নির্যাতন চালায়।

শরিফুলের মায়ের অভিযোগ, খবর পেয়ে তার মা আয়েশা ছুটে যান এবং তাদের হাত-পা ধরেও ছেলেকে ছাড়াতে পারেননি। পরে থানায় সংবাদ দিলে রাত ৮টার দিকে এসআই শফিকুর রহমান ঘটনাস্থলে গেলেও শরিফুলকে উদ্ধার না করে থানায় ফিরে যান বলে।

রাতে শরিফুলকে খালেকের বাড়িতে রাখা হয় এবং আবারও নির্যাতন চালানো হয়। অবশেষে শনিবার রাতে ওসি মোস্তাফিজুর রহমান গিয়ে শরিফুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন বলে শরিফুলের মা আয়েশার ভাষ্য।

শরিফুল বলেন, “খালেক আমাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে টাকা চুরির অপবাদ দেন এবং চারজন মিলে কয়েক দফা মারপিট করেন। দুই পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল ও পায়ের পাতায় সুঁচ ফুটিয়ে দেন এবং দড়ি দিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে প্রায় ১৬ ঘণ্টা ধরে লোহার রড় ও লাঠি দিয়ে মারপিট করেছেন। ব্লেড দিয়ে পা কেটেছেন।

“খালেক কখনও বলেন- তুই আমার ২০ হাজার টাকা নিয়েছিস, কখনো বলেন ৫০ হাজার এবং সোনাদানা চুরি করেছিস। তার টাকা কবে হারিয়েছে সেটাও আমি জানি না। আমি চুরি করিনি।”

শরিফুলের মা আয়েশা বলেন, “চুরির অপবাদ দিয়ে শরিফুলকে বর্বর নির্যাতন করেছে তারা। মারপিটের কারণে আমার ছেলে রক্ত বমি করেছে। দুপায়ে ও শরীরে মারাত্মক জখম হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।”

কালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শরিফুলের হাত বাঁধা অবস্থায় দেখেছেন। তাদেরকে বলার পর তারা হাতের বাঁধন খুলে দেন।

“তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্নি দেখা যাচ্ছিল। ছেলেটির চুরির অভ্যাস আছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল এবং ফিরে এসেছে। তবে শনিবার রাতে পুলিশ আবার গিয়ে ছেলেটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।”

তিনি নিজে ডাক্তার নিয়ে এসে তার চিকিৎসা করিয়েছেন বলে জানান তিনি।

নওগাঁ সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মো. মোকাদ্দে রাব্বানী বলেন, রোববার দুপুরে রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শরিফুলকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শরিফুলের শরীরের মারপিট ও রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে।

থানার এসআই শফিকুর রহমান শফি বলেন, “শুক্রবার রাতে আমি ঘটনাস্থলে যাইনি। ওই এলাকায় একজন আসামিকে ধরতে গিয়েছিলাম।”

রাণীনগর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত প্রধান আসামি আব্দুল খালেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছেলেটির মা আয়েশা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আব্দুল খালেকসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।