গোপালগঞ্জে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা সালিশে ‘মীমাংসা’

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা তিন লাখ টাকায় সালিশে মীমাংসার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গোপালগঞ্জে প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2017, 09:23 AM
Updated : 27 August 2017, 09:26 AM

কোটালীপাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরা ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান লক্ষ্মী রানী সরকার শনিবার বিকালে উপজেলার শুয়াগ্রাম ইউনিয়নের শুয়াগ্রামে সালিশ বৈঠক বসিয়ে ঘটনার মীমাংসা করেন বলে অভিযোগ মেয়েটির বাবার।

পরে শনিবার রাতে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে মামলার পর এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুয়াগ্রাম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে গত ১৫ অগাস্ট ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে গ্রামের খোকন বৈদ্যর ছেলে অনিক বৈদ্য, রামগোবিন্দ বৈদ্যর ছেলে দীপংকার বৈদ্য, নির্মল বৈদ্যর ছেলে রনি বৈদ্য (১৮) ও তারন বৈদ্যর ছেলে শিমুল বৈদ্যর বিরুদ্ধে।

সালিশে অনিককে ৭৫ হাজার টাকা, দীপংকরকে ৭৫ হাজার, রনিকে ৫০ হাজার, শিমুলকে ৫০ হাজার ও বিমল বৈরাগীর ছেলে তমাল বৈরাগীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সালিশের কথা স্বীকার করে লক্ষ্মী রানী বলেন, “তাৎক্ষণিকভাবে টাকা আদায় করে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরার কাছে সে টাকা গচ্ছিত রাখা হয়েছে।”

তবে টাকা গচ্ছিত রাখার কথা অস্বীকার করে মতিয়ার বলেন,“শনিবার বিকালে সালিশ বৈঠকে বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উদ্যোগ সফল হয়নি।”

ঘটনা মীমাংসা হলে রাতে থানায় মামলা হত না এবং পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারও করত না বলে দাবি করেন তিনি।

শনিবার গভীর রাতে ছয়জনকে আসামি করে মেয়েটির বাবা মামলা করেছেন বলে জানান কোটালীপাড়া থানার এসআই শাহাদৎ হোসেন।

আসামিরা হলেন, অনিক বৈদ্য, দীপংকর বৈদ্য, রনি বৈদ্য,শিমুল বৈদ্য, তমাল বৈরাগী ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের শিশির বিশ্বাসের ছেলে সুমন বিশ্বাস (২০)।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে,  গত ১৫ অআস্ট সন্ধ্যায় শুয়াগ্রাম মন্দির থেকে নাম কীর্তন শুনে বাড়ি ফেরার পথে শুয়াগ্রাম সেতুর কাছে নির্জন স্থানে নিয়ে অনিক বৈদ্যের নেতৃত্বে আসামিরা দলবেঁধে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে।

মেয়েটির বাবা বলেন, “আমার অসম্মতিতে শনিবার বিকালে বৈদ্য বাড়ির সালিশ বৈঠকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। পরে রাতে আমি বাদী হয়ে কোটালীপাড়া থানায় মামলা করি।”

আসামি অনিকের বাবা খোকন বৈদ্য সালিশ বসানোর কথা স্বীকার করে বলেন, “সামাজিকভাবে বিষয়টি আমরা মীমংসা করেছি। জরিমানার টাকা তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরার কাছে জমা দিয়েছি। তারপরও কেন মামলা হলো বুঝতে পারছি না।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহাদৎ বলেন, “ধর্ষণ ঘটনায় সালিশ বৈঠকে মীমাংসা করার কথা শুনেছি। এ ধরনের অপরাধের বিচার সালিশ বৈঠকে করার সুযোগ নেই।

“এ ঘটনায় শনিবার রাতে মামলার পর অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি অনিককে গ্রেপ্তার করা  হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”

শিগগিরই ওই ছাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হবে বলে জানান তিনি।