রায় কার্যকর হলে ‘খুশি’ হবে সাত পরিবার

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলায় নূর হোসেনসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী। তারা হাই কোর্টের রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন।

মজিবুল হক পলাশ, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2017, 03:10 PM
Updated : 22 August 2017, 04:13 PM

আসামিদের করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার যে রায় দেয়, তাতে সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও সাবেক তিন র‌্যাব কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে।

নিম্ন আদালতে নয়জনকে দেওয়া বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডের রায়ে কোনো পরিবর্তন আনেনি হাই কোর্ট।

নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়ি চালক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী শামসুন নাহার নুপুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এই রায়ে সন্তুষ্ট। এই রায়ে আমি খুব খুশি। আমরা চাই দ্রুত এই রায় কার্যকর করা হোক। এই রায় তো বহাল রাখা হয়েছে। ফাঁসি কার্যকর করা হলে আমরা সাতটি পরিবার খুবই খুশি হব।

“আমার স্বামীর লাশের পেট ফুটো করে দেওয়া হয়েছে। তার লাশটি ধরে যে আমরা কাঁদব সেই অবস্থা ছিল না। আমার বাচ্চা জন্মের পর তার বাবাকে দেখেনি। আমি আমার মেয়েটির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।”

সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা চান তিনি।

সাত খুন ঘটনায় একটি মামলার বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট ও খুশি। আমরা চাই দ্রুত এই রায় কার্যকর করা হোক। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”

তিনি গণমাধমকর্মীদেরও ধন্যবাদ জানান এবং আপিলে হাই কোর্টের রায় বহাল থাকবে বলে প্রত্যাশা করছেন।  

আরেক মামলার বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল বলেন, “নিম্ন আদালতের রায় উচ্চ আদালতে বহাল রেখেছে। প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হয়েছে। আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট এবং দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।”

চন্দন সরকারের মেয়ে ডা. সুস্মিতা সরকার বলেন, “আমরা এই রায়ে অবশ্যই খুশি হয়েছি। প্রথমে আমরা কিছুটা একটা শঙ্কায় ছিলাম। আমরা চাই দ্রুত এই রায় কার্যকর করা হোক।”

চন্দন সরকারের গাড়ি চালক ইব্রাহিমের স্ত্রী হনুফা বেগম বলেন, “খুনিদের ফাঁসির রায় হওয়ায় খুশি। আমরা চাই দ্রুত খুনিদের ফাঁসি কার্যকর করা হোক।”

নিহত সিরাজুল ইসলাম লিটনের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “রায় যেটাই হয়েছে তা যাতে দ্রুত কার্যকর করা হয় সেই দাবি জানাচ্ছি।”

নিহত তাজুল ইসলামের ছোট ভাই রাজু আহমেদ জানান, সাত খুনে শুধু সাতজন ব্যক্তিকেই খুন করা হয়নি। সাতটি পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। কারণ এই সাতজন মানুষই ছিল পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

তিনিও রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।

নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বলেন, “এই রায়ে খুশি। দ্রুত রায় বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। আমার জীবিতাবস্থায় ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই। তাহলে মরে গেলেও আত্মা শান্তি পাবে।” 

ফাইল ছবি

নিহত মনিরুজ্জান স্বপনের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম বলেন, “আমরা অনেক খুশি, দ্রুত রায় কার্যকর হলে আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে আমরা অমানবিক জীবনযাপন করলেও অনেক কষ্টের মাঝেও আনন্দ লাগছে। আমরা খুবই খুশি। আর কোনো বিলম্ব না করে দ্রুত রায় কার্যকর করা হোক।”

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই মামলায় নিম্ন আদালতে ২৬ জনের ফাঁসি দিয়েছিল। এই ২৬ জনের ডেথ রেফান্সে ও আপিলের রায়ে নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের ফাঁসি বহাল রেখেছে এবং ১১ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়েছে এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত নয় জনের সাজা বহাল রেখেছে।

“কিন্তু আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে। তাহলে আমিসহ দেশবাসী খুশি হতো।”

রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই রায়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আইনের ঊর্ধ্বে যে কেউ নয়, এই রায় তার প্রমাণ। আমরা স্বস্তিবোধ করছি। আমরা চাই দ্রুত এই রায় কার্যকর করা হোক।”

সিদ্ধিরগঞ্জ মিজমিজি এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, নূর হোসেন ও তার বাহিনীর সিদ্ধিরগঞ্জে খুন, “চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে রাম রাজত্ব কায়েম করেছিল। সাত খুন ঘটনায় তার প্রকাশ পেয়েছে। আমরা এই রায়ে খুশি। আমরা খুনিদের দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।”

সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা পোশাক কারখানারকর্মী দেলোয়ার হোসেন ও ফারুক আহম্মেদ সাত খুন নারায়ণগঞ্জের কলঙ্ক উল্লেখ করে রায়ে আনন্দিত ও স্বস্তি বোধ করেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।

ওই ঘটনায় নিহত নজরুলের স্ত্রী বিউটি ও চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল দুটি মামলা করেন। দুই মামলার তদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মণ্ডল।

নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ‌্য দিয়ে এ মামলার আসামিদের বিচার শুরু করেন। একসঙ্গে দুই মামলার বিচার শেষে চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করেন তিনি। তাতে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি নয়জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড।