সাত খুন: ‘এমন অপরাধ আর কেউ যেন না করে’

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলায় প্রধান আসামি নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ সব আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি প্রত্যাশা করেছেন নিহতের স্বজনরা।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2017, 06:41 AM
Updated : 22 August 2017, 08:51 AM

নারায়ণগঞ্জের জজ আদালতে ২৬ আসামিকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড ও নয়জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হাই কোর্টেও বহাল থাকবে এমন আশার কথা জানিয়ে তারা বলেছেন, তারা এমন শাস্তি চান যাতে আর কেউ এমন অপরাধ করার সাহস না পায়।

আসামিদের করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে হাই কোর্ট সোমবার এ মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করবে।

সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার বারদী ইউনিয়নের আলগীরচর এলাকায় নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের গাড়ির চালক ইব্রাহিমের বাড়িতে গেলে প্রতিক্রিয়ায় তার স্ত্রী হনুফা বলেন, “এমন শাস্তি চাই যাতে আর কেউ এমন অপরাধ না করে।”

মামলার বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, “নিম্ন আদালতের দেওয়া রায় উচ্চ আদালতেও বহাল থাকুক। আমরা চাই নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ সকল আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি। এবং দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।”

নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম বলেন, “খুনিদের এমনভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক যাতে সারা বিশ্বের মানুষ জানে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন, আমরা চাই তার কথা বহাল থাকুক।

“আমাদের যাতে সান্ত্বনা বিচার না দেওয়া হয়। আমরা চাই সুষ্ঠু বিচার।”

নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বলেন, “আমার ছেলে তাজুলসহ সাতজন মানুষকে অপহরণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

“আমার বড় ছেলে উর্পাজন করত। আমরা নানা সংকটে দিশেহারা। তবু নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হলে আমরা এতটুকু সাস্ত্বনা পাব যে খুনিদের বিচার হয়েছে।”

নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক নিহত জাহাঙ্গীর আলমে স্ত্রী সামসুন নাহার নুপুর বলেন, “আমার বিয়ের ১০ মাসের সময় ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় স্বামী নিহত হয়েছে।

“আমার মেয়ের বয়স বর্তমানে তিন বছর। মেয়ে বাবাকে দেখতে পায়নি। বাবা বলে ডাকতে পারেনি। আমার স্বামীসহ সাতজন মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। লাশ ভেসে উঠতে না পারে সে জন্য পেট ফুটো করে, ইট বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমি চাই, আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি বহাল থাকুক এবং রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক।”

নিহত সিরাজুল ইসলাম লিটনের ভাই সাইফুল ইসলাম মিন্টু বলেন, “নিম্ন আদালতের রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকুক এবং দ্রুত রায় কার্যকর করা হোক। খুনিরা যেন কোনোভাবে পার পেয়ে না যায়।”

নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ে সুস্মিতা সরকার বলেন, “সাত খুনের মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া রায়টিই যাতে উচ্চ আদালতে বহাল থাকে আমরা এই প্রত্যাশা করছি এবং সেই সাথে দ্রুত যাতে রায়টি কার্যকর করা হয় সেই দাবিও জানাচ্ছি।”

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে নারায়ণগঞ্জবাসী। তারা হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনে নামে এবং কয়েক দফা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। গণমাধ্যম ও সারাদেশে ঘটনাটি আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়।