সরেজমিনে দেখা গেছে, গরু, ছাগল, ভেড়াসহ নানা গৃহপালিত প্রাণী নিয়ে জেলার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে দুর্গত মানুষ।
কোনো কোনো আশ্রয় স্থলে ছাউনি থাকলেও অনেকগুলোতে নেই। তাদের থাকতে হচ্ছে খোলা জায়গায়। বেশিরভাগ গবাদি পশু খোলা স্থানে বৃষ্টিতে ভিজছে। মাঠে ঘাস না থাকায় পশুর খাদ্য যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে দুর্গত মানুষ। বাধ্য হয়ে তারা পানিতে ডুবে থাকা পচা ঘাস খাওয়াচ্ছে পশুদের।
পশুদের বিশুদ্ধ পানিও দিতে পারছে না তারা। কেউ কেউ বিভিন্ন গাছের পাতা খাওয়াচ্ছে। কারও কারও খড়ের পালা বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। আবার কোথাও খড়ের পলাতে পচন ধরেছে। পচা খড়ও খাওয়াচ্ছে পশুদের।
ধুনটের শিমুলবাড়ী গ্রামের নান্নু মিয়া বলেন, তার ৫০টি ভেড়া ছিল। এর মধ্যে ছয়টি মারা গেছে। আরও কয়েকটি অসুস্থ হয়েছে। ভেড়াগুলো পাতলা পায়খানা এবং খেতে না পেয়ে মারা গেছে।
“বাড়ির চারপাশে বন্যার পানি ওঠায় ভেড়াগুলো বাইরে নেওয়া যাচ্ছে না। আগে ভেড়াগুলো মাঠে ঘুরে ঘুরে খেত। এখন সে উপায়ও নেই। মাঠে পানি ওঠায় ঘাসও পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন গাছের পাতা এবং বন্যায় ডুবে যাওয়া ঘাস তুলে নিয়ে এসে খাওয়াচ্ছি।”
বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোক এসে ভেড়াগুলোকে দেখে গেছে বলে তিনি জানান।
“আগে বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে ঘাস নিয়ে এসে গরুকে খাওয়াচ্ছিলাম। এখন সে উপায়ও নেই। পানিতে ডুবে যাওয়া ঘাস বাধ্য হয়েই খাওয়াচ্ছি।”
চিথুলিয়া গ্রামের দুলাল হোসেন বলেন, তার দুটি গরু কোনো খাবার খাচ্ছে না। মড়ক ধরেছে। উপজেলা থেকে পশু ডাক্তার নিয়ে এসেও কোনো লাভ হয়নি।
সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুরের ফরিদ উদ্দিন বলেন, “বন্যায় বাড়িতে পানি ওঠায় গরু ছাগল নিয়ে বাধে আশ্রয় নিয়েছি। গরু ছাগলের খাবার যোগাতে হিমশিম খাচ্ছি। তারপরেও গরু খাবার না খেয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে।”
ধুনট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নুর আলম সিদ্দিকী বলেন, বন্যার সময় গবাদি পশুর ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা এবং পচা খড়, ঘাস আর নোংড়া পানি খাওয়ার কারণে এক ধরনের রোগ হয়।
“খাদ্য সংকটের পাশাপাশি এ ধরনের রোগ বন্যা এলাকায় হচ্ছে। আমি নিজেও চিথুলিয়া গ্রামে গিয়ে এ রোগের চিকিৎসা করে এসেছি। তারপরও গরু মারা গেছে।”
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আ ম শফিউজ্জামান বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকা সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনটে লোক রাখা হয়েছে। তারা খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এ সময় দুষিত পানি পচনশীল ঘাস খড় খাওয়ানোর ফলে গবাদি পশুর বিভিন্ন ধরনের মড়ক হয়। এসব করণে পশুর অনেক সময় খাবারের প্রতি অনীহা হয় এবং পাতলা পায়খানা হয়।