বাঁধ ভেঙে সাদুল্লাপুরে ১০ গ্রাম প্লাবিত, দুই শিশুর মৃত্যু

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে ঘাঘট নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন করে আরও দশটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে; ডুবে গেছে হাজার হাজার একর ফসলির জমি।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2017, 03:52 PM
Updated : 17 August 2017, 04:22 PM

বৃহস্পতিবার ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও ঘাঘট নদীর পানি সামান্য কমলেও করতোয়ার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বন্যার পানিতে ডুবে সাদুল্লাপুর ও সুন্দরগঞ্জে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বন্যা কবলিত সাত উপজেলায় ২৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগামী ১৯ অগাস্ট অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

সাদুল্লাপুরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মনিরুজ্জামান জানান, বুধবার মধ্যরাতে পুরান লক্ষ্মীপুর দ্বীপ ও শালাইপুর এলাকায় ঘাঘট নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, পানি ঢুকে বনগ্রাম ইউনিয়নের জয়নপুর, উত্তর মনদুয়ার, দক্ষিণ মনদুয়ার, শালাইপুর, চকশালাইপুর, হবিবুল্লাহপুর, তালুক মনদুয়ার, বদলাগাড়ি, ইসবপুর ও কামারপাড়া ইউনিয়নের পুরান লক্ষ্মীপুর প্লাবিত হয়েছে। 

এসব এলাকার ঘরবাড়ি, দোকনপাঠ, ফসলি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকশ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে।

এছাড়া বৃহস্পতিবার গোবিন্দগঞ্জের তরফকামাল, তরফমনু, চষকপাড়া, চক গোবিন্দ ও কাইয়াগঞ্জ এলাকায় গোবিন্দগঞ্জ-ফুলবাড়ি-দিনাজপুর সড়কের উপর দিয়ে করতোয়া নদীর পানি উঠেছে।

সাদুল্লাপুরের রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল করিম দুলা জানান, পানিতে তার ইউনিয়নের আরাজী তরফ কামাল গ্রামের হেলাল মিয়ার দুই বছর বয়সী ছেলে সাঈদ মিয়া মারা গেছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যান মনোয়ার আলম সরকার জানান, তার ইউনিয়নের বজরা কঞ্চিবাড়ি গ্রামের জান্নাত আলীর ছেলে সিপাত মিয়া (০৩) মারা গেছে পানিতে ডুবে।

এ নিয়ে জেলায় বন্যার পানিতে চারজনের মৃত্যু হলো। এর আগে গোবিন্দগঞ্জে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা কবলিত সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ী ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে ৯০টি।

এসব আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষকে গাদাগাদি হয়ে রাত কাটাতে দেখা গেছে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তবে করতোয়া নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম মন্ডল জানান, বিদ্যালয় চত্বর ও কক্ষে পানি ওঠায় জেলায় ২৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে অন্যান্য বিদ্যালয়ের লেখাপড়া চললেও বন্যা কবলিত বিদ্যালয়গুলোর কারণে আগামী ১৯ অগাস্ট অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে স্থগিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। 

জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল জানান, এবারের বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য ৬২৬ মেট্রিক টন চাল ও ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা বন্যা দুর্গত এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। মজুদ রয়েছে ৬৪ মেট্রিক টন চাল ও তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া আরও পাঁচশ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।