বাঁধ ভেঙে গাইবান্ধা শহরে আতঙ্ক

গাইবান্ধায় হঠাৎ শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করায় শহরজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2017, 04:18 AM
Updated : 16 August 2017, 04:36 AM

ঘাঘট নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ডেভিড কোম্পানি পাড়া রেললাইনের কাছে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় বড় আকারে এই ফাটল দেখা দেয়।

এ সময় সেখানকার মানুষজন আসবাপত্র নিয়ে ছুটোছুটি শুরু করলে শিশুদের কান্নায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

খবর পেয়ে পৌরমেয়র শাহ্ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর মিলন, কাউন্সিলর কামাল আহমেদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বালির বস্তা ফেলে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

মেয়র জাহাঙ্গীর বলেন, আগেভাগে টের পাওয়ায় শহরবাসী রক্ষা পেয়ে গেছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে শহরের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ত।

মেয়র বাঁধ রক্ষায় শহরবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায়ও বড় আকারে ফাটল ধরে পানি ঢুকতে শুরু করায় শহরজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পরে এলকাবাসী ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় বালির বস্তা ফেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

বন্যার পানি অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায় গাইবান্ধায় একের পর এক বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বন্যার পানিতে ডুবছে বিভিন্ন গ্রাম। ইতোমধ্যেই জেলার গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও সাঘাটা উপজেলার পাঁচ জায়গায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে অর্ধশতাধিক গ্রাম ডুবে গেছে। 

নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর বলছেন, তারা ঝুকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় কাজ করছেন, আতংকিত হওয়ার কিছু নেই।

“মঙ্গলবার জেলার প্রায় ৭৮ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের মধ্যে ফুলছড়ির সিংড়িয়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০টি পয়েন্টে লিকেজ দেখা দেয়। বালির বস্তা ও বাঁশের পাইলিং করে ওই স্থানগুলো রক্ষা করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

এছাড়া ঠিকাদার ও রংপুর-৬৬ ডিভিশনের সেনাসদস্যের ৮৫ জনের একটি দল কাজ করছে বলে তিনি জানান।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে তার ইউনিয়নে করতোয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের হাতিয়াদহ এলাকায় ধসে নতুন করে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এর আগে সোমবার মধ্যরাতে বাঁধটির বিশ্বনাথপুর পয়েন্টে ধস নেমে বিশ্বনাথপুর, গোসাইপুর, দুর্গাপুর, রামনাথপুর, রহলা, বিশুবাড়ি, মারিয়া, বগুলাগাড়ি, সিংজারিসহ ১০ গ্রাম প্লাবিত হয় বলে জানান চেয়ারম্যান।

পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তৌফিকুল আমিন মণ্ডল টিটু বলেন, তার ইউনিয়নের কিশামত চেরেঙ্গায় করতোয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে মধ্য রামচন্দ্রপুর, শালমারা, ঝাপড় দৌলতপুর, করিয়াটা, জগন্নাথপুর ও চাকবালাসহ ১১ গ্রাম নিমজ্জিত হয়েছে।

“ভাঙন বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনের দূরবর্তী কিশামত চেরেঙ্গা এবতেদায়ী মাদ্রাসাটি স্রোতের তোড়ে সম্পূর্ণ ভেসে গেছে।”

উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টু জানিয়েছেন, এ ইউনিয়নের টোংরারদহ এলাকায় করতোয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৬০ ফিট ধসে গেছে।

“এতে বড় শিমুলতলা, তেকানি, প্রজাপাড়া, কেশবপুর, সগুনা, পশ্চিম মির্জাপুর, কাশিয়াবাড়ী, কিশোরগাড়ী, গনকপাড়া, হাসানখোর, জাফর, মুংলিশপুরসহ ইউনিয়নের ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়।”

সাঘাটা উপজেলার ভরতখালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামছুল আজাদ শীতল বলেন, মঙ্গলবার বিকালে ভাঙ্গামোড় গ্রামের যমুনার নীলকুঠি ক্রস বাঁধ ভেঙে পাঁচ থেকে সাতটি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে।

“আর হুমকির মুখে পড়েছে সাঘাটা-গাইবান্ধা সড়ক।”

জেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এলকাবাসী ও সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে রাতদিন অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সকল প্রকার সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।