সৈয়দপুর রক্ষা বাঁধে ধস, শহর প্লাবিত

নীলফামারীর সৈয়দপুর শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে সদরের অনেক এলাকায় প্লাবনের সঙ্গে সঙ্গে পানি চলে এসেছে বিমানবন্দরের কাছে।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2017, 10:15 AM
Updated : 14 August 2017, 05:53 PM

পশ্চিম পাটোয়ারী পাড়ায় রোববার সকালে খড়খড়িয়া নদীর বাঁধ ভেঙে সৈয়দপুরের পাটোয়ারী পাড়া, বসুনিয়া পাড়া, কুন্দল, নয়াবাজার ও বাঁশবাড়ি প্লাবিত হয়।

এতে শহরের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব বাড়ির কোথায় কোমর বা কোথাও হাঁটু পানি উঠে গেছে।

তাছাড়া পানি উঠেছে সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

সেনাবাহিনী ও পৌরসভার সদস্যরা বিধ্বস্ত বাঁধটি মেরামতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেলে সোমবার স্থানীয়দের সহায়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধটি মেরামতের কাজ করছে।

সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম  বলেন, “নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় বাঁধের ভাঙা অংশটি মেরামত কাজে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেখান দিয়ে এখনও হুহু করে পানি প্রবেশ করছে। সেটি বন্ধ করতে বাঁশ দিয়ে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।

বাঁধটি ধসের কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দর এবং সেনানিবাস এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে বিমানবন্দরের পূর্ব দিকে দেয়ালের অন্তত ১০০ মিটার ধসে গেছে। তবে এখনও বিমানবন্দরে পানি প্রবেশ করেনি বলে জানান তিনি।

তাছাড়া সৈয়দপুরের চিকলি নদীসহ বেশ কটি নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এদিকে দুপুরে পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি পরিদর্শন করেন। এসময় তার সাথে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরী, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান, পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার ও সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদুল মোমিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বজলুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রী বলেন, সৈয়দপুর শহর রক্ষা বাঁধটিসহ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত সব বাঁধ প্রথমে সংস্কার এবং পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হবে। এ জন্য একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

বন্যা দুর্গতদের পাশে সরকার সবসময় আছে এবং থাকবে। তাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

সৈয়দপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে রোববার থেকে কমতে শুরু করেছে তিস্তার পানি।

সোমবার সকাল থেকে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে রোববার সকাল থেকে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

তিনি বলেন, নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। আগামী তিন দিন পানি বৃদ্ধির তেমন সম্ভাবনা নেই।

এদিকে নদীর পানি কমলেও এখন নদীর তীরবর্তী ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ এখনও পানিবন্দি রয়েছে। এসব এলাকায় রাস্তাঘাট, বাড়িঘর এখনও কোমর থেকে হাঁটু পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

এসব এলাকার আটটি বাঁধ, রাস্তা-ঘাট ব্রিজ, কালর্ভাট বিধ্বস্ত হওয়া মানুষ আরও বেশি বিপদে পড়েছে।

ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলায় সরকারি ভাবে ১১৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৭ লাখ টাক ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম।