পুলিশকে ওই অস্ত্রের সন্ধান আমি দিয়েছিলাম: শামীম ওসমান

কয়েক মাস আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে যে বিপুল পরিমাণ ভারি অস্ত্র-গোলাবারুদ ধরা পড়েছিল, তার সন্ধান তিনিই পুলিশ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সাংসদ শামীম ওসমান।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2017, 07:11 PM
Updated : 12 August 2017, 07:16 PM

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলছেন, বড় ধরনের ষড়ন্ত্রের উদ্দেশ্যে ওই সব ভারি অস্ত্র-শস্ত্র আনা হয়েছিল।

জাতীয় শোক দিবস সামনে রেখে শনিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় এক সভায় শামীম ওসমান বলেন, “নারায়ণগঞ্জে অনেক খেলা হচ্ছে। ধৈর্য্য ধরেছি, আরও ধৈর্য্য ধরব। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। রূপগঞ্জে অস্ত্র ধরা পড়েছে।এই অস্ত্র সামান্য অস্ত্র নয়, হেভি মেশিনগান, রকেট লঞ্চার, গ্রেনেডসহ অত্যাধুনিক অস্ত্র।এই অস্ত্র নারায়ণগঞ্জের পুলিশ ধরেছে। অস্ত্রের ব্যাপারে আমি তাদেরকে ইনফরমেশন দিয়েছিলাম।

“এতো অস্ত্র রূপগঞ্জে কেন আনা হয়েছিল? তিনশ ফুটের বাইরে কেন অস্ত্র রাখা হয়েছিল, ওই খান দিয়ে প্লেন উড়ে। আমার নেত্রী প্লেনে চড়ে ওখান দিয়ে যায়। তাদের টার্গেট একটাই বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে হলে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে হবে।”

এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছিল রূপগঞ্জ থেকে

গত ১ জুন রাত থেকে পরদিন বিকাল পর্যন্ত রূপগঞ্জের একটি জলাশয় থেকে ৬২টি এসএমজি, দুটি দূরবীন, দুটি রকেট লঞ্চার, এসএমজির ৪৪টি ম্যাগজিন, পাঁচটি পিস্তল, ৪৯টি শেল, দুটি ওয়াকিটকি, ৪২টি হ্যান্ড গ্রেনেড, বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস, টাইম ফিউজসহ বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ৩ জুন উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের বাসুন্দ্র আতলাবো এলাকার শীতলক্ষ্যা নদী থেকে আরও পাঁচটি এসএমজি উদ্ধার করা হয়।

শামীম ওসমান বলেন, ষড়যন্ত্র যারাই করুক তারা কখনও সফল হবে না, প্রয়োজনে নিজের জীবন দিয়ে তার নেত্রীকে রক্ষা করবেন।

“তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমি শামীম ওসমান মরে গেলে কিছু হবে না। আমি শামীম ওসমান এমপি না হলেও কিছু এসে যাবে না। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের আকাশে সুবাতাস বইছে, পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে-একটা মাত্র মানুষ সেটা হচ্ছে-শেখ হাসিনা।

শামীম ওসমানের জনসভায় উপস্থিতি

“সেই শেখ হাসিনাকে দুর্বল করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি বলি, অবশ্যই ষড়যন্ত্র হবে, হয়ত আমি বাঁচব না। হয়ত আবার বোম্ব ব্লাস্ট হবে, হয়ত মরব। কিন্তু আমি একটা কথা বলতে চাই, শেখ হাসিনার মতো আল্লাহ ভক্ত দেখি না, তার মতো দেশপ্রেমিক দেখি নাই। শয়তান শয়তানি করবে, কিন্তু আল্লাহর সাথে শয়তান পারে না।”

বিচার বিভাগ থেকেও ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ করে শামীম ওসমান বলেন, “আমার পার্টির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।’ আমি এক বছর আগে থেকে বলেছিলাম, ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিচার বিভাগ থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

“যারা ভাবছেন বাংলাদেশটা পাকিস্তান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যার শরীরে জাতির পিতার রক্ত, সেই তিনি নওয়াজ শরিফ, তারা বোকার রাজ্যে বাস করছেন। বাংলাদেশ পাকিস্তান না, আর শেখ হাসিনা নওয়াজ শরিফ না।”

সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মোহাম্মদ শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চন্দন শীল, জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন মাস্টার, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শিরিন বেগম, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ কয়েকজন বক্তব্য রাখেন।

তবে অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আনিসুর রহমান দীপু এবং নারায়ণগঞ্জের কোনো সংসদ সদস্যকে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে শামীম ওসমান বলেন, “আমি অনেককে দাওয়াত দিয়েছিলাম। আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার  হোসেন ভাইকে, ছোট বোন মেয়র আইভীকে দাওয়াত দিয়েছি। অনেকেই ক্ষুব্ধ। নেতাকর্মীরা অনেকেই বলছেন, ওনারা আসলেন না কেন?

“আমার মনে হয়, তাদের ব্যক্তিগত কাজ ছিল বলে তারা আসতে পারেন নাই। তবে আওয়ামী লীগের আগামী দিনে যে অনুষ্ঠান হবে ইনশাল্লাহ্ আমরা সবাই একসাথে থাকব।”

দুপুর ২টার পর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। কড়া পুলিশ পাহারায় সমাবেশ শেষে শোক র‌্যালিটি নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের ডিআইটি বাণিজিক এলাকা হয়ে দুই নম্বর রেলগেইট এলাকায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।

শামীম ওসমানের এই কর্মসূচির জন্য দুপুর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের শিবু মার্কেট এলাকা থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-ডেমরা সড়কের নগরীর হাজীগঞ্জ আইইটি স্কুল এলাকা থেকে কোনো যানবাহন নগরীতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ে হাজার হাজার মানুষ।

বিভিন্ন বাস কাউন্টারে মালামাল নিয়ে নারী পুরুষ-শিশুদের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। পুরো নগরীতে কোনো যানবাহন চলেনি সন্ধ্যা পর্যন্ত।