বগুড়ার সেই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত মিলেছে

বগুড়ায় কিশোরীকে ‘ধর্ষণ’ ও মা-মেয়েকে ন্যাড়া করার ঘটনায় ডাক্তারি পরীক্ষার পর ধর্ষণের আলামত পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2017, 06:17 AM
Updated : 7 August 2017, 04:59 AM

ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এ ঘটনায় দায়ের করা ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মেডিকেল প্রতিবেদন পাওয়া গেছে; সেটা পজিটিভ। ধর্ষণের আলামত মিলেছে।”

বগুড়ার জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে এম সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে  ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয় বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে তুফানসহ মামলার দুই আসামিকে ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি।

বগুড়ার ওই কিশোরীকে ভালো কলেজে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে গত ১৭ জুলাই ও পরে কয়েকবার ধর্ষণ করেন জাতীয় শ্রমিক লীগ বগুড়া শহর শাখার আহ্বায়ক তুফান সরকার। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন তার কয়েকজন সহযোগী।

বিষয়টি জানতে পেরে তুফানের স্ত্রী আশা ও তার বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ ‘একদল সন্ত্রাসী’ গত ২৮ জুলাই দুপুরে ওই কিশোরী এবং তার মাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাদের মারধর করে নাপিত দিয়ে দুজনের মাথা ন্যাড়া করে দেয়।

এ ঘটনায় ২৮ জুন বিকালে তুফানসহ ১০ জনকে আসামি মামলা করেন ওই কিশোরীর মা। মামলার পর ঘটনাটি গণমাধ্যমে এলে দেশ জুড়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়; এরপর তুফানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে জাতীয় শ্রমিক লীগ।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে প্রধান আসামি তুফানকে ইতোমধ্যে প্রথম দফায় তিনদিন এবং দ্বিতীয় দফায় দুইদিন মিলিয়ে দুই দফায় মোট পাঁচদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে শিমুল নামে একজন এখনও পলাতক রয়েছেন।

বাকি আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তারের পর কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকিকে চারদিন এবং তুফানের স্ত্রী আশাকে দুই দফায় মোট তিনদিন, শ্বশুর জামিলূর রহমান রুনুকে দুইদিন, শাশুড়ি রুমি খাতুনকে দুই দফায় তিনদিন, সহযোগী যুবক মুন্নাকে দুই দিন করে দুই দফায় মোট চারদিন এবং তুফানের গাড়িচালক জিতু ও নরসুন্দর জীবন রবিদাসকে দুইদিন করে রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

রুপম ও দিপু নামের আরও দুই আসামিকে তিনদিন করে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এছাড়া গ্রেপ্তারের পর আতিক নামে আরেক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ায় তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেনি পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদের পর নাপিত জীবন কুমার রবিদাস ও আসামি দিপু বুধবার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আজাদ বলেন, তুফানের ধর্ষণের কথা আতিক স্বীকার করেছে। তিনি বলেছেন, ধর্ষিত কিশোরী যেন গর্ভবতী না হয় সেজন্য তুফানের কথামত জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এনে দিয়েছেন।

আর নাপিত জীবন রবিদাস জবানবন্দিতে কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকির নির্দেশে ওই কিশোরী ও তার মায়ের মাথা মুণ্ডন করে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান তিনি।

আজাদ বলেন, প্রথমে মুন্না ডাকতে এলে না গেলেও পরে আতিক এসে তাকে নিয়ে যাওয়ার পর কাউন্সিলর মারজিয়া হাসানের নির্দেশে মা-মেয়ের মাথা মুণ্ডনের কথা জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন জীবন রবিদাস।

মাথার চুল কেটে দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধের হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে ভাষ্য এই নরসুন্দরের।

আসামিদের মধ্যে তুফান এবং রুমকিকে শুক্রবার আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের পাঁচদিনের রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ।