তুফানের ভাই মতিন কোথায়?

যার ছত্রছায়ায় কিশোরী ধর্ষণ মামলার আসামি তুফান সরকার বগুড়ায় অপরাধ ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, সেই বড় ভাই মতিন সরকারকে খুঁজছে পুলিশ।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2017, 10:19 AM
Updated : 3 August 2017, 10:48 AM

এক মেয়েকে বাড়িকে থেকে তুলে নিয়ে উপর্যুপরি ধর্ষণের পর মা-মেয়েকে পিটিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় তুফানকে গ্রেপ্তারের পর দুই ভাইয়ের কুখ্যাতির কথা এখন মানুষের মুখে মুখে।

ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে কসাই থেকে পরিবহন মালিক বনে যাওয়া যুবলীগ নেতা মতিন এই ধর্ষণ মামলার আসামি না হলেও তার কুখ্যাতিরও কোনো জুড়ি নেই।

তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হত্যা ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

১৬ বছর আগের একটি হত্যা মামলায় সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে বগুড়ার আদালত। ২০০১ সালের ওই ঘটনায় উজ্জ্বল নামে এক তরুণকে হত্যা করা হয়।

এই মামলায় মতিনককে গ্রেপ্তারে আগে একাধিকবার পরোয়ানা জারি হলেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

বগুড়া সদর থানার ওসি এমদাদ হোসেন বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উজ্জ্বল হত্যা মামলায় মতিন সরকারের বিরুদ্ধে ২০ জুলাই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আমরা গতকাল সেটা হাতে পেয়েছি।”

তাকে গ্রেপ্তারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। শিগগিরই একটা সুখবর পাবেন।”

তবে গত কয়েক দিনে মতিনকে বগুড়া শহরে দেখা যাচ্ছে না বলে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন। মতিন এখন কোথায় কোথায়- বগুড়ায় চলছে সেই আলোচনা।

বুধবার বেলা ১১টায় এবং বিকাল সাড়ে ৫টায় বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মতিনের ব্যক্তিগত ও ট্রাকমালিক সমিতির অফিস তার বাসাতেই। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বা মহড়া ছাড়া তিনি সাধারণত বাড়ির বাইরে যান না।

তবে তার স্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি ব্যবসায়িক কাজে বাইরে আছেন।

কয়েক দিন আগেও সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মতিনের বাড়িতে তরুণ-যুবাদের ভিড় লেগে থাকত। বুধবার বাড়িতে মতিনের স্ত্রী-সন্তান ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি।

আশপাশের লোকজনও কয়েক দিন ধরে মতিনকে দেখেন না বলে জানিয়েছেন।

শহরবাসীর মুখে মুখে চাপা প্রশ্ন, মতিন কি গা ঢাকা দিয়েছেন? রাজনৈতিক পাড়া বলে পরিচিত শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা এলাকায় লোকজন বলাবলি করছে, মতিন ভারতে পালিয়ে গেছেন।

বগুড়ার চকসূত্রাপুর কসাইপট্টির মজিবুর রহমান সরকারের মেজো ছেলে এই মতিন। মজিবুর মাংস ও চামড়া বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। তার এই বড় ছেলে কয়েক বছর আগে রাজনৈতিক নেতাদের হাত করে জেলা ট্রাকমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন।

এই সূত্রে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা ও প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে চলাফেরা করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন।

আর তার প্রশ্রয়েই তার পথ অনুসরণ করে বেড়ে উঠেছেন তার ছোটভাই তুফান সরকার। এই মতিন ও শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক সামছুদ্দিন শেখ হেলালসহ কয়েকজনের হাত ধরে তুফান নাম লেখান রাজনীতিতে। কয়েক বছর আগে তিনি হন বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক।

২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর চকসূত্রাপুর এলাকার যুবদলকর্মী এমরান খুনের পর তুফানের কুখ্যাতি ছড়াতে থাকে। দিনের বেলা খুন হওয়া এমরানের খণ্ডবিখণ্ড লাশ পাওয়া গিয়েছিল। তুফান ওই মামলার আসামি।

এই হত্যাকাণ্ডের পর তুফান দখল, চাঁদাবাজি, জুয়া ও মাদক ব্যবসায় জড়ান বলে এলাকাবাসী ভাষ্য। তারপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। অর্থের সঙ্গে পেয়েছেন রাজনৈতিক মর্যাদাও।

বগুড়ার জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল জানান, তুফানের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও মারধরসহ ছয়টি মামলা রয়েছে।

এলাকাবাসী বলছে, প্রাণের ভয়ে অনেক ঘটনায় তুফানের বিরুদ্ধে কেউ মামলা করতে সাহস পায় না। সব ঘটনায় মামলা হলে কয়েকশ হয়ে যেত।

এভাবেই একের এক অপরাধে জড়িয়ে পড়া  তুফান সম্প্রতি বগুড়ার এক কিশোরীকে ভালো কলেজে ভর্তির লোভ দেখিয়ে শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এরপর তার স্ত্রী আশা ও তার বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি দলবল নিয়ে ওই কিশোরী ও তার মাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধরসহ মাথা ন্যাড়া করে দেন।

ঘটনার জেরে তুফানের মেজো ভাই মতিনের বিভিন্ন অপরাধের খবরও বেরিয়ে আসে গণমাধ্যমে।

ঘটনার পর শুক্রবার বিকালে তুফানসহ ১০ জনকে আসামি মামলা করেন ওই কিশোরীর মা। মামলার পর বগুড়া শহর শাখার আহ্বায়ক তুফানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

মামলার আসামি শিমুল ছাড়া সবাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।