ধর্ষণ মামলা নিতে পুলিশের টালবাহানার অভিযোগ

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় ধর্ষণের অভিযোগে এক যুবককে ধরে পুলিশে দেওয়ার পর মামলা নেওয়ার আগে অন্তত ১৫ ঘণ্টা সময় নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে।

আহসান হাবীব নীলু কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2017, 03:25 PM
Updated : 25 July 2017, 06:38 PM

মামলা করার আগে পুলিশ ওই ব্যক্তিতে ইউএনওর কাছে হাজির করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচারের চেষ্টাও করে বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

রোববার গভীর রাতে উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরেরহাট বাগানবাড়ী এলাকায় এক গৃহবধূ সন্তানের জননী ‘ধর্ষণের’ শিকার হন। 

সোমবার রাত ১২টার দিকে এ ঘটনায় রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরেরহাট বাগানবাড়ীর নুর ইসলামের ছেলে আবিদুল ইসলামের (২৮) বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করে চিলমারী থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার আবিদুলকে আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ‘নির্যাতনের’ শিকার ওই গৃহবধূকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

চিলমারী থানার ডিউটি অফিসার এএসআই রিপন সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার সকাল ৯টার মধ্যে রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের চৌকিদার নুর মোহাম্মদসহ স্থানীয় লোকজন ‘ধর্ষক’ ও ‘ধর্ষিতাকে’ থানায় সোপর্দ করে।

প্রতীকী ছবি

“এর ১২ ঘণ্টা পর ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচারকার্য সম্পাদনের জন্য সোপর্দ করা হয়। কিন্তু প্রায় এক ঘণ্টা পর ভ্রাম্যমাণ আদলতের এখতিয়ার বহির্ভূত বলে তাদের ফেরত পাঠায়।”

রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, রোববার গভীর রাতে আবিদুল ইসলাম এলাকার এক গৃহবধূর ঘরে ঢুকে স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাকে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে।

“গৃহবধূর চিৎকার শুনে তার শ্বশুর ধর্ষক আবিদুলকে ধরে তিনিও চিৎকার করতে থাকেন। পরে গ্রামবাসীর সহায়তায় আবিদুল ও ওই নারীকে আমার কাছে নিয়ে আসে।”

তিনি বলেন, আপোষযোগ্য না হওয়ায় চৌকিদার নুর মোহাম্মদের মাধ্যমে সোমবার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে তাদের চিলমারী থানায় সোপর্দ করা হয়।

“কিন্তু চিলমারী থানা পুলিশ রহস্যজনকভাবে পরবর্তী ১২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো মামলা গ্রহণ না করে তাদের থানা হাজতে আটকে রাখে এবং রাত ৯টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসায় নিয়ে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার শুরু করে।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে এধরনের ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার করা যায় কি না জানতে চাইলে ইউএনও মির্জা মুরাদ হাসান বেগ ভ্রাম্যমাণ আদালত না চালিয়ে মুলতবি ঘোষণা করেন।

এ ব্যাপারে চিলমারী থানার ওসি কৃষ্ণ চন্দ্র সরকার বলেন, বাদী ও বিবাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে কিছুটা সময়ক্ষেপণ হয়েছে।

রাত ১২টায় মামলা রেকর্ড করা হলেও মামলার এজাহারে দুপুর দেড়টা উল্লেখ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পুলিশ এটা পারে। আগেই ফাঁকা রাখা হয়েছিল।”

চিলমারীর ইউএনও মির্জা মুরাদ হাসান বেগ বলেন, রাত ৯টায় ছেলে ও মেয়েকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করা হয়। প্রথমত দীর্ঘ বিলম্বে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

“এছাড়া আমার বিবেচনায় এ ধরনের ঘটনা ভ্রাম্যমাণ আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত। তাই ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার করা হয়নি। পুলিশকে নিয়মিত মামলা রজ্জু করার নির্দেশ দেওয়া হয়।”

কুড়িগ্রাম জজ আদালতের আইজীবী সামছুল হক সরকার বলেন, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার্য নয়। তারপরও দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দের ঘটনা ‘পুলিশের অসৎ উদ্দেশ্য’ প্রমাণ করে।