তিন সপ্তাহে ২ শিশু খুন, নারীসহ নিখোঁজ ২

শরীয়তপুরে তিন সপ্তাহেরও কম সময়ে দুই শিশু খুন হয়েছে; নিখোঁজ হয়েছে এক গৃহবধূসহ দুই জন।

কে এম রায়হান কবীর শরীয়তপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2017, 11:40 AM
Updated : 25 July 2017, 11:41 AM

এ ঘটনায় স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। 

নিহতরা হলো- ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার সরদার কান্দি গ্রামের লেহাজ উদ্দিন শেখের মেয়ে ৩য় শ্রেণির ছাত্রী লিজা আকতার (১০) ও সদর উপজেলার উত্তর ভাষানচর গ্রামের ইদ্রিস মাদবরের ছেলে মাদ্রাসাছাত্র ওসমান গনি মাদবর (১১)।

নিখোঁজরা হলো- ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার ওহাব ঢালী কান্দি গ্রামের নান্নু খানের ছেলে মাদ্রাসাছাত্র সিয়াম মাহমুদ আরাফাত (১১) ও নড়িয়া উপজেলার কাপাশপাড়া গ্রামের আয়নাল বেপারীর স্ত্রী তিন সন্তানের জননী পারভীন আকতার ( ২৯)।

লিজা নিখোঁজের একদিন পর গত ১৬ জুলাই তার চাচি নাছরিন আকতার সখিপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

২৩ জুলাই তাদের বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ছৈয়াল কান্দি বিলে তার ভাসমান অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। ওইদিনই থানায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়।

মামলার বরাত দিয়ে সখিপুর থানার ওসি মঞ্জুরুল আকন্দ জানান, ১৫ জুলাই সখিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্রী লিজা আকতার বাড়ির পাশের রাস্তায় সাইকেল চালাতে যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ হয়।

“এর আটদিন পর ছৈয়াল কান্দি বিলে বুলবুল সরদারের পাটক্ষেতের পাশে ভাসমান অবস্থায় লিজার অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়।”

লিজার চাচি নাছরিন জামা কাপড় দেখে লাশ শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় বলে জানান ওসি মঞ্জুরুল।  

ওসি জানান, লিজার মা-বাবার সন্দেহ অনুযায়ী লিজা খুনের ঘটনায় তাদের প্রতিবেশী ফরিদ শেখ ও লিজার চাচাত ভাই জাকির শেখকে গত ২৩ জুলাই (লাশ উদ্ধারের দিন) পুলিশ গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

“তারা খুনের কথা স্বীকার করেছে।”

পালং মডেল থানার এএসআই আশরাফ আলী জানান, গত রোববার (২৩ জুলাই) সদরের দাদপুর নুতনহাট নোমানিয়া কওমিয়া ও হাফেজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ওসমান গনি মাদবর বাড়ি থেকে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মাদ্রাসায় যায়। সেখানে সঙ্গে নেওয়া ভাতের ক্যারিয়ার রেখে পাশে নুতনহাট বাজারে যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ থাকে।   

“সোমবার বিকালে কীর্তিনাশা নদীর পাড়ে একটি আখ খেতে তার গলাকাটা ও এক চোখ উপড়ানো লাশ পাওয়া যায়।”

এএসআই আশরাফ জানান, এ ঘটনায় নিহতের বাবা ইদ্রিস মাদবর বাদী হয়ে পালং মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।  

এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে জানান আশরাফ।

নিখোঁজ সিয়াম মাহমুদ আরাফাত

সখিপুর থানার ওসি মঞ্জুরুল আকন্দ জানান, গত ৭ জুলাই ডিএমখালী ইউনিয়নের মোল্লাকান্দি নুরানী মাদ্রাসার ছাত্র সিয়াম মাহমুদ আরাফাত মাদ্রাসায় যায়। এরপর থেকে তার খোঁজ নেই।

নিখোঁজের পরদিন সিয়ামের বাবা নান্নু খান সখিপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন বলে জানান ওসি।

নড়িয়া থানার ওসি আসলাম উদ্দিন জানান, গত রোববার (২৩ জুলাই) সকালে নড়িয়ার কাপাশপাড়া গ্রামের পারভিন আকতার তার তিন সন্তানকে বাড়ি রেখে উপজেলা সদরে যাওয়ার কথা বলে বের হন। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই।

এ ঘটনায় পারভিনের ভাই ধলু সরদার নড়িয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এহসান শাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইতিপূর্বে সিয়াম নামের শিশুটি বাড়ি থেকে একাধিকবার পালিয়েছে। আশা করি তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে।

“অন্যান্য খুন বা নিখোঁজের বিষয়গুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।”

তাছাড়া নড়িয়ার নিখোঁজ নারী স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে লুকিয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করছেন তিনি।

সখিপুরের এক ছাত্রের অভিভাবক ইকবাল খান বলেন, “একের পর এক বিদ্যালয়গামী শিশু নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। আমাদের বাচ্চারা বিদ্যালয়ে আসতে ভয় পায়। এ ব্যাপারে প্রশাসন কর্যকর ব্যবস্থা নিয়ে কঠোর হওয়া উচিৎ।”

মাদ্রাসাছাত্র ওসমান গনির বাবা ইদ্রিস মাদবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার অবুঝ হাফেজ শিশুটিকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যাতে আর কোনো শিশুকে খুন করতে কেউ সাহস না পায়।”

সখিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেসবাহ উদ্দিন বলেন, “লিজার নিখোঁজ ও মরদেহ উদ্ধারে আমাদের এলাকায় বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গেছে। শিশুরা ভয়ে বিদ্যালয়ে আসতে চাচ্ছে না।”

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আযাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লিজা খুনের পর আমরা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছি, যাতে শিশুরা নিরাপদে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করতে পারে।”