মহল বিশেষের ইন্ধনে মামলা: ইউএনও তারিক

বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকাকালে কয়েকটি কঠোর প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কারণে ‘নাখোশ মহল বিশেষের ইন্ধনে’ তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে মনে করেন গাজী তারিক সালমন।

মনির হোসেন কামাল বরগুনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2017, 10:04 AM
Updated : 1 August 2017, 08:24 AM

পঞ্চম শ্রেণির এক শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্র ছাপানোয় মামলার আসামি হন বরিশালের আগৈলঝাড়ার সাবেক ইউএনও গাজী তারিক সালমন, যিনি বর্তমানে বরগুনা সদরের ইউএনও।

গত বুধবার এ মামলায় বরিশাল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে আবেদন নাকচ করে তাকে হাজতে পাঠানো হয়। দুঘণ্টা পর আবার জামিন দেন একই বিচারক।

এ ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে মামলার বাদী বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে দল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। 

তারিক সালমনের সঙ্গে কথা বলে এবং স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে আগৈলঝাড়ার শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে পিয়াল নামের এক পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেন সেখানকার ওই সময়ের ইউএনও গাজী তারিক সালমন। বহিষ্কার হওয়ার পর পিয়াল ইউএনওর সঙ্গে অসদাচরণ করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে ছয় মাসের কারাদন্ডও দেওয়া হয়।

পিয়ালকে নকল সরবরাহের দায়ে একই দিন ওই কলেজের দপ্তরি নারায়ণকেও দুই মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া নকল সরবরাহের দায়ে কলেজের প্রভাষক অরুণ বাড়ইকে পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়।

এসব কারণে যারা নাখোশ তাদের ইন্ধনে এ মামলা হয়েছে বলে তারিক সালমন মনে করেন।

এই সেই আমন্ত্রণপত্র

তারিক সালমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আগৈলঝাড়া উপজেলার সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ৭৯ লাখ টাকা ফেরত পাঠান তিনি। স্থানীয় একটি মহল ওই টাকা তাদের নিজেদের মতো করে খরচ করতে চেয়েছিলেন। তাতে সফল না হয়ে তারা ইউএনওর উপর ক্ষুব্ধ হন।

“এসব কারণে তারা মামলায় ইন্ধন দিয়েছেন।”  

তারিক সালমন বলেন, শিশুদের হৃদয়ে যাতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রোথিত করে দেওয়া যায়, শিশুরা যাতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করতে পারে এবং সৃজনশীল ও সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমে উৎসাহ দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি ব্যবহার করে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আমন্ত্রণপত্রটি ডিজাইন করা হয়।

তিনি জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস ও জাতীয় শিশুদিবস-২০১৭ উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই শিশুর আঁকা দুটি ছবি ব্যবহার করে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০১৭-এর আমন্ত্রণপত্রটি তৈরি করা হয়েছিল।

“আমন্ত্রণপত্রের প্রচ্ছদে (ফ্রন্ট কাভার) ওই প্রতিযোগিতায় 'গ' গ্রুপে প্রথম হওয়া আগৈলঝাড়া এসএম বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময়ের আঁকা মুক্তিযুদ্ধের রণক্ষেত্রের একটি ছবি এবং শেষ প্রচ্ছদে (ব্যাক কাভার) 'খ' গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী আগৈলঝাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী অদ্রিজা করের আঁকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়েছিল।”

এ ব্যাপারে বরগুনা জেলা প্রশাসক মহা. বশিরুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাস্তবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করা হয়নি। মূলত শিশুদের উৎসাহ দিতেই ওই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছিল।”

যেহেতু এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে, তাই আইনগতভাবেই এর সমাধান হবে, বলেন তিনি।

কোর্ট হাজতে আটক রাখার বিষয়টি ইউএনও তারিক বরগুনা জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন।

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, বরিশাল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজু তার বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকার মানহানি মামলা করেন। ওই মামলায় মুখ্য মহানগর হাকিম (ভারপ্রাপ্ত) অমিত কুমার দে সমন জারির আদেশ দেন। গত ১৯ জুলাই ছিল সমন ফেরতের ধার্য দিন।

মামলাকারী ওবায়েদ উল্লাহ সাজু

“ওইদিন আমি আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবী মোখলেসুর রহমান খানের মাধ্যমে জামিন আবেদন ও ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি প্রার্থনা করি। আদালতে বাদীপক্ষের অ্যাডভোকেট শেখ আবদুল কাদের ও স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসসহ প্রায় ৫০ জন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।”

তিনি চিঠিতে আরও বলেন, বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিম আলী হোসাইন প্রায় আধঘণ্টা উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনেন। পরে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং মামলার শুনানির জন্য আগামী ২৩ জুলাই দিন ধার্য করেন। এরপর তাকে প্রায় দুই ঘণ্টা কোর্ট হাজতে আটক রাখা হয়।

“কোর্ট পুলিশের সদস্যরা আমাকে বারবার কারাগারে চলে যাওয়ার অনুরোধ করতে থাকলে আমি তা অগ্রাহ্য করে সেখানে অবস্থান করি। ইতিমধ্যে আমার জামিন নামঞ্জুরের বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি।

“আনুমানিক বেলা ২টার সময় হাকিম আলী হোসাইন তার আদালতের পেশকারকে দিয়ে আমাকে ও আমার আইনজীবীকে তলব করেন এবং সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে বলে পেশকার আমাদের জানান।”