স্বর্ণদ্বীপের সোনা ফলানো খামার

বঙ্গোপসাগরের জাহাইজ্জার চরের নাম বদলে স্বর্ণদ্বীপ রাখার পর সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন খামার, পরিকল্পিত গ্রাম।

কাজী এনামুল হক কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2017, 05:42 AM
Updated : 21 July 2017, 06:12 AM

নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচরের কাটাখাল থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার ভেতরে বঙ্গোপসাগরের এ দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশন ও কুমিল্লা এরিয়ার হাতে।

এখানকার বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা মেজর মোরশেদুল আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, দ্বীপের পাঁচটি বৃহদাকার লেক ও অসংখ্য ছোট-বড় পুকুরে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছ চাষ করা হচ্ছে।

“ভিয়েতনাম থেকে সিয়াম জাতের ১৫০০ নারকেল চারা আমদানি করে বাগান তৈরি করা হয়েছে। একই বাগানে শাকসবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় মৃত পশুপাখি ও কৃত্রিম আবর্জনা মাটিতে পুঁতে রাখা হয়।”

এখানকার ডেইরি ফার্ম সম্পর্কে মেজর ছাইদুর রহমান বলেন, এখানে দুই শতাধিক মোষ, ৩০০ ভেড়া, ১২০০ বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস, মুরগি ও কবুতর রয়েছে।

“মোষের দুধ থেকে পনির তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১০০ কেজি পনির উৎপাদন হয়।”

তিনি জানান, বিশেষ পদ্ধতিতে তিন-চারবার সেচ দিয়ে লোনা পানি সরিয়ে গভীর নলকূপের পানি দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ১০ একর জমিতে ৬০ জন বর্গাচাষীর মাধ্যমে হাইব্রিড হীরা ধান-২ চাষ করা হয়েছে।

“বৈরী আবহাওয়ায়ও ৩০২ মণ ধান উৎপন্ন হয়েছে। অনুরূপ পদ্ধতিতে ১০০ একর জমিতে ধান চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।”

প্রায় ৩৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপের দায়িত্ব ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনী গ্রহণ করে বলে তিনি জানান।

“বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ দ্বীপে দুটি মাল্টিপারপাস সাইক্লোন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এখানে এ ধরনের আরও তিনটি সেন্টার নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

মেজর মোরশেদুল আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় ১৬ লাখ টাকায় ১১৬ হেক্টর জায়গায় বনায়ন করা হয়েছে।

“দ্বীপের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাংশে দুই হাজার কেজি কেওড়াবীজ হেলিকপ্টারে করে ছিটানো হয়েছে। ৬০ হাজার পবন-ঝাউয়ের চারা লাগানো হয়েছে। ৩৫টি গ্রাম তৈরি করা হয়েছে।”

সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে দ্বীপের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে শিকারি ও গাছচোরদের উৎপাত নেই বরে তিনি জানান।

দ্বীপ ঘুরে বক, সারস, ফিঙ্গা, ঘুঘু, পানকৌড়ি, কাঁকড়া, শালিক, কোরা, ডাহুক, বাবুইসহ নাম না জানা পাখির অবাধ বিচরণ দেখা গেছে। এখানকার বনে বিপুলসংখ্যক মোষ নির্বিঘ্নে চড়ে বেড়ায়।

সেনা কর্মকর্তারা জানান, স্বর্ণদ্বীপের মিলিটারি ডেইরি ফার্ম থেকে উৎপাদিত মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, পনিরসহ উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রী এখানকার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা সেনানিবাসে সরবরাহ করা হবে। বেশি হলে অন্য জায়গায়ও সরবরাহ করা হবে।

ইতোমধ্যেই এখান থেকে বর্গাচাষ, পশুপালন, মাছ চাষসহ বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত হয়ে ৪৩৭৯ পরিবারের ১৬ হাজার ৩৭০ মানুষ প্রত্যক্ষ সুবিধা পাচ্ছে বলে সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার স্বর্ণদ্বীপ পরিদর্শনে এসে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাংবাদিকদের বলেন, স্বর্ণদ্বীপ শেখ হাসিনার স্বপ্নের দ্বীপ।

“স্বর্ণদ্বীপের প্রকল্পগুলো প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত প্রিয়। তিনি সব সময় এ দ্বীপের খোঁজখবর রাখছেন। তাঁর আন্তরিক সহায়তায় ও সেনাবাহিনীর চেষ্টায় স্বর্ণদ্বীপ একসময় আরেকটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হবে।”