“আগে জানলে মাদ্রাসায় পড়াবার দিতাম না। মোজাম্মেল আমার ছোট পুত আছিল। সবাই বলল তারে আরবিতে দেই। আরবি পড়া বালা, এর লাগগেই তারে দিছিলাম। একদিন মরণ তো লাগব, পুত মানুষ হয়ে দোয়া করব।”
আহাজারি করতে করতে এ কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার আশুলিায়ায় ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে গ্রেপ্তার মোজাম্মেলের মা।
এ সময় তার বাবা আব্দুল মান্নান মাষ্টারও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
শনিবার রাত ১টার দিকে আশুলিয়ার চৌরাবালি এলাকায় ইব্রাহীমের ভাড়া দেওয়া টিনশেড বাড়ি ঘিরে ফেলে র্যাব। প্রায় ১১ ঘণ্টা বাড়িটি ঘিরে রাখার পর সন্দেহভাজন চার জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে।
এরা হলেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের সাংকিভাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে মোজাম্মেল হক মাসুদ (১৮), চট্টগ্রামের রাউজানের কদলপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ইরফানুল ইসলাম ওরফে সুফিয়ান খান ওরফে এরফান (২০), গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালি গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে রাশেদুন্নবী রাশেদ (২০) ও সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ থানার হুগলি গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে মো. আলমগীর (১৮)।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার পুলিশ ময়মনসিংহের ত্রিশালে মোজাম্মেলের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
তারা বাড়িঘর তল্লাশিসহ মোজাম্মেলের বাবা আব্দুল মান্নান মাষ্টার, মা শামসুন্নাহার, ভাবি জেসমিন আক্তারসহ আশপাশের লোকজনের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেন।
ওসি জাকিউর রহমান বলেন, “জঙ্গি মোজাম্মেল হোসেন সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য তার বাড়িতে যাই। বাড়িঘর তল্লাশি করে কোনো কিছু পাওয়া যায়নি।”
পরিবারের সকল সদস্যের তথ্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি তার পরিবার এখন পুলিশের নজরদারিতে থাকবে বলে জানান ওসি।
মোজাম্মেলের মা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ্রেপ্তার হওয়ার খবর জানার পর থেকে তাদের বাড়িতে রান্না বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের ছোট ছেলে মোজাম্মেল জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে এটা বিশ্বাস করতে পারছেন না।
সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকার মানুষ তাদের বাড়িতে ভিড় করায় পরিবারের সবাই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মোজাম্মেলের বাবা আব্দুল মান্নান মাষ্টার বলেন, মোজাম্মেল আশুলিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সোমবার থেকে সাধারণ মানুষসহ সাংবাদিকরা তাদের বাড়ি এসে মোজাম্মেলের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। মঙ্গলবারও অনেকে এসেছেন।
“দুপুরে ত্রিশাল থানা পুলিশের একটি দল এসে বাড়ি-ঘর তল্লাশি করেছে। মোজাম্মেল ও আমাদের পরিবার সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। আমরা যতটুকু জানি ততটুকুই বরে দিয়েছি।”
“সেই ছেলে আজ জঙ্গি হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়ায় আমি হতাশ। ছেলে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত এটা মেনে নিতে পারছি না।”
মোজাম্মেলের প্রতিবেশী আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আব্দুল মান্নান ওরফে লালু মাষ্টারের পরিবার সাধারণ জীবনযাপন করে। কয়েক বছর আগে মাদ্রাসা থেকে অবসর নিয়ে বাড়িতেই থাকেন তিনি।
“তার ছোট ছেলে মোজাম্মেল মাদরাসায় লেখাপড়া করত। মাঝেমধ্যে বাড়িঘরে আসত।। তার বড় ছেলে ওমানে থাকেন, এক ছেলে কাঠের ব্যবসা করেন।”
মোজাম্মেল জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় এলাকার মানুষ বিস্মিত হয়েছে বলে জানান কুদ্দুস।
মোজাম্মেলের ভাবি জেসমিন আক্তার বলেন, বাড়ি আসলে কিংবা মোবাইল ফোনে কথা হলে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করত নামাজ পড়েছি কিনা। সে সব সময় কাজ বাদ দিয়ে আগে নামাজটা পড়ে নেওয়ার কথা বলত।