বিক্ষোভের মধ্যে মাদারীপুর স্পিনিং মিল দখলে নিল সরকার

‘সরকার ও ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের কারণে’ মাদারীপুর টেক্সটাইল অ্যান্ড স্পিনিং মিলস লিমিটেড সরকার দখলে নিয়েছে।

মাদারীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2017, 01:11 PM
Updated : 14 July 2017, 01:18 PM

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস্ করপোরেশন (বিটিএমসি) ও মাদারীপুর জেলা প্রশাসন শুক্রবার দুপুরে মিলটিতে তালা দেয়।

এ সময় কারখানার প্রতিবাদকারী ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে র‌্যাব ও পুলিশ লাঠিপেটা করে। 

মিলটিতে ছয় শতাধিক শ্রমিক কর্মরত ছিলেন, যার অধিকাংশ নারী।

মাদারীপুর সদর থানার ওসি জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, রূপালী ব্যাংক থেকে সাতশ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এই সরকারি মিলটি পরিচালনা করা হচ্ছিল।

“কিন্তু পরিচালনাকারীরা সরকারের শর্ত ভঙ্গ ও পাওনা টাকা না দেওয়ায় বিটিএমসিকে ‘মাদারীপুর টেক্সটাইল অ্যান্ড স্পিনিং মিল’ দখলে নিতে রাষ্ট্রপতি প্রজ্ঞাপন জারি করেন।”

ওসি বলেন, এ প্রজ্ঞাপনটি বাস্তবায়ন করতে বিটিএমসির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, স্থানীয় জেলা প্রশাসন পুলিশ ও র‌্যাবের সহায়তায় মিলে তালা দিতে গেলে শ্রমিকরা বাধা দেয়।

“এরপর শ্রমিকরা রাস্তার ওপর অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলে তারা আবার মিলের ভেতর গিয়ে অবস্থান নেয়।”

এ সময় পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয় বলে জানান ওসি।

বিটিএমসির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিজিএম) কাজী ফিরোজ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, “অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা মিলটি পুরনায় চালু করে দেব। সরকারি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় রাষ্ট্রপতি মিলটি দখলে নেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।

“আমার কাজ মিলটি সরকারের দখলে নেওয়া। আমি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সেই কাজটিই করেছি। এখানে এসে শুনেছি যে, এই মিলটি রূপালী ব্যাংকের কাছ থেকেও সাতশ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে।”

মাদারীপুর টেক্সটাইল অ্যান্ড স্পিনিং মিলের জেনারেল ম্যানেজার কাওসার আহমেদ বলেন, “বিএমটিসির লোকজন এসে আমাদের বলল আমরা পনেরো কোটির মতো টাকা সরকারকে পরিশোধ করিনি। তাই মিলে তারা তালা মেরে দিয়েছেন। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।”

মিলে প্রায় ৬-৭ শ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে জানান তিনি।

মাদারীপুরের এএসপি (সার্কেল) সুমন কুমার দেব বলেন, মিলটি বন্ধ করার সময় উত্তেজিত শ্রমিকেরা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করে। ওই সময় কিছু শ্রমিক ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে চলে আসে।

“পরে লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”

রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা মিল শ্রমিক সেলিনা আক্তার ও সদর উপজেলার কলাগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা সাথী আক্তার বলেন, তারা দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এই মিলটিতে কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। হঠাৎ মিলটি বন্ধ করে দেওয়ায় তারা বেকার হয়ে পড়লেন।

ফিরোজা নামের এক শ্রমিক বলেন, “আমাদের সকল শ্রমিকদের আড়াই মাসের বেতনের টাকা পাওনা রয়েছে। আমাদের ওই পাওনা পরিশোধ না করেই মিলে তালা মেরে দিল। আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণের কিস্তি চালাই। এখন আমি এহন ক্যামনে কিস্তির টাকা শোধ করমু নে?”

এই মিলে তারা প্রায় ছয়শ শ্রমিক কাজ করেন, যার মধ্যে পাঁচশ জনই নারী বলে জানান

ফিরোজা।