অনাথ হাবিবার জাঁকজমক বিয়ে

জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যে অনাথ হাবিবার বিয়ের আয়োজন হচ্ছে ব্রাহ্মণাবড়িয়ার সরকারি শিশু পরিবারে। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিপীযূষ কান্তি আচার্য, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2017, 02:48 PM
Updated : 13 July 2017, 04:11 PM

শিশু পরিবারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার গায়েহলুদ। শুক্রবার দুপুরে সেখানেই বিয়ে। এ উপলক্ষে শিশু পরিবারে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

মা-বাবা হারিয়ে ছয় বছর বয়সে হাবিবা আক্তার আশ্রয় নিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরকারি শিশু পরিবারে। প্রায় এক যুগ কেটেছে এখানে। এবার ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী তাকে শিশু পরিবারে ছাড়তে হচ্ছে।

কিন্তু হাবিবাকে যেনতেনভাবে বিদায় না দিয়ে তার জন্য বর ঠিক করে বিয়ের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান অনাথ হাবিবার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করে তার বর ঠিক করেছেন। বর জাকারিয়া আলমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সোনারগাঁ গ্রামে।

জাকারিয়াকে পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি দিয়েছেন এসপি মিজানুর রহমান। এরপর বিয়ের দিন (১৪ জুলাই) ধার্য করেন।

তিন ভাই বোনের মধ্যে হাবিবা সবার ছোট। বড় বোনকে বিয়ে দিয়েছেন তার মামা-মামি। আর একমাত্র ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া হকার্স মার্কেটে কাজ করেন।

হাবিবার এ বিয়ে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

জাকারিয়া আলম

হাবিবা আক্তার

মিজানুর রহমান জানান, বিয়েতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক দেবেন সোনার গয়নার সেট। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ঘর নির্মাণ করে দেবেন।

“এছাড়া জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া হবে আরও কিছু স্বর্ণালংকার, টিভি, ফ্রিজ, আলমারি ইত্যাদি।

“হাবিবার কর্মসংস্থানের জন্য সেলাই মেশিন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন সরকারি শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা বেগম।”

এসএসসি পাশ হাবিবার বিয়েকে ঘিরে গত এক সপ্তায় দফায় দফায় সভা হয়েছে। বিয়ের রঙ্গিন নিমন্ত্রণপত্র ছাপানো হয়েছে বলেও এসপি মিজানুর জানান।

হলুদ অনুষ্ঠানে হাবিবার পাশে এসপি মিজানুর রহমান

আইনমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়র, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় তিনশ অতিথি বিয়েতে উপস্থিত থাকবেন বলেও জানান এসপি।

বিয়ের পর সন্ধ্যায় পুলিশ সুপারের বাসভবন থেকে বর-কনেকে বিদায় দেবেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।

শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা বেগম বলেন, কয়েক মাস আগে হাবিবার বয়স যখন ১৮ বছর পূর্ণ হয় তখন নীতিমালা অনুযায়ী তাকে শিশু পরিবার ছাড়ার বিষয়টি জানানো হয়। এক পর্যায়ে হাবিবার মামা-মামিকে খবর দেওয়া হলো হাবিবাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মামা-মামি এসে নিয়ে যেতে চাইলে হাবিবার বিদায়বেলায় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

“হাবিবা আমার ওড়না ধরে রেখেছিল। তখন আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ি। আমিও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। তখন বিষয়টি পরিচালনা কমিটিকে জানাই। সিদ্ধান্ত হলো হাবিবা আপাতত শিশু পরিবারেই থাকবে। তাকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হবে।”

রওশন বলেন, বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তারপর তিনিই সব করলেন।

হাবিবার হলুদ অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার

তিনি বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব নেন। এগিয়ে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার। হাবিবার বিয়ে নিয়ে তারা কথা বলেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে। বিয়ের কাজে যুক্ত হন সমাজসেবা অধিদপ্তর ও সরকারি শিশু পরিবার সংশ্লিষ্টরা।

আয়োজকরা জানান, বিয়েতে বরযাত্রীসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য খাবারের তালিকায় থাকছে আট পদের খাবার। এর মধ্যে রয়েছে মুরগির রোস্ট, পোলাও, টিকা, গরুর মাংস, সবজি, ডাল, সালাদ ও মিষ্টি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন বলেন, “আমরা ব্যস্ত আছি হাবিবার বিয়ে নিয়ে। শেষ পর্যন্তও যেন কোনো ত্রুটি না হয় সেদিকে সতর্ক খেয়াল রাখছি। আশা করছি, জাঁকজমকপূর্ণভাবেই বিয়ে সম্পন্ন হবে।”