স্কুলের পরীক্ষা বন্ধ রেখে যুবলীগ নেতার মায়ের কুলখানি

শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রেখে স্কুলমাঠে যুবলীগ নেতার মায়ের কুলখানির আয়োজন করা হয়েছে।

কে এম রায়হান কবীর শরীয়তপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2017, 11:21 AM
Updated : 8 July 2017, 12:11 PM

শনিবার দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয় শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার ইদিলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।

পরীক্ষা বন্ধ করে ওই স্কুল মাঠে চলে গোসাইরহাট পৌরসভা যুবলীগের আহ্বায়ক, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও পৌর কাউন্সিলর কামাল উদ্দিন সরদাররের মায়ের কুলখানির খাওয়া-দাওয়া।

প্রধান শিক্ষক পরীক্ষা স্থগিত রেখে এ ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি দিতে পারেন না বলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন অভিভাবক জানান, গোসাইরহাট উপজেলাসহ বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। একই সূচিতে একই সময়ে সব স্কুলে পরীক্ষা নেওয়ার কথা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার পরীক্ষা চলাকালে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান অনিবার্য কারণ দেখিয়ে শনিবারের পরীক্ষা বন্ধের নোটিস দেন বলে জানান তারা।

স্কুলটিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এক হাজার ৭২৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। দুই শিফটে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কামাল উদ্দিন সরদাররের মায়ের কুলখানির আয়োজন করা হয়। মাঠের পূর্ব পাশে প্যান্ডেল তৈরি করে রান্নাবান্না চলছিল। বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আয়োজনের দেখাশোনা করছিলেন।

যুবলীগ নেতার পারিবারিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করলেও প্রধান শিক্ষক মান্নান ‘প্রশ্ন না পাওয়াকে’ কারণ দেখিয়েছেন।

“প্রশ্নপত্র না পাওয়ায় পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। যুবলীগ নেতা কামাল উদ্দিন সরদারের অনুষ্ঠানের বিষয়টিও বিবেচনায় ছিল। শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ করে অনুমতি দিয়েছি।”

অন্য সব পরীক্ষা শেষে স্থগিত পরীক্ষাটি নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে কামাল উদ্দিন সরদার বলেন, “আমার বাড়িতে জায়গা কম থাকায় আমি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বরাবর লিখিত আবেদন করি। মানবিক কারণেই আমাকে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”

শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান মিয়া বলেন, “প্রধান শিক্ষক এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। কোনো অবস্থাতেই পরীক্ষা স্থগিত রেখে কোনো ব্যক্তির অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিতে পারেন না।”

বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান করার জন্য স্কুল মাঠ ব্যবহারের কোনো বিষয় জানা নেই জানিয়ে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াহইয়া খান বলেন, “পরীক্ষা বন্ধ রেখে এমন কাজ করা অন্যায়। প্রধান শিক্ষক কারও সঙ্গে আলাপ না করেই একা এমন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না।”

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনক মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। কীভাবে প্রধান শিক্ষক পরীক্ষা বন্ধ রেখে বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠানের অনুমতি দিল, তার ব্যাখ্যা নেওয়ার জন্য গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”