ডিএনডিতে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধের কোথাও কোথাও দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতার পাশাপাশি আরও অনেক এলাকায় হালকা বৃষ্টিতেও বাড়িঘর-রাস্তাঘাট তলিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বহু মানুষ।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2017, 09:25 AM
Updated : 7 July 2017, 09:25 AM

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সেহাচর, নয়াআটি, নিমাইকাশারী, তুষারধারা, বক্সনগর, মজিববাগ, রসুলবাগ, লামাপাড়া, লালখাঁ, সিআইখোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে।

দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকার গৃহবধূ দিলশাদ জেমি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কদিনের ভারি বৃষ্টিতে তাদের বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। রান্নাঘর ডুবে গেছে। রাস্তাঘাটও হাঁটুপানিতে ডুবে আছে।

“সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে পানি সরছে না। সরার কোনো লক্ষণ দেখছি না।”

একই এলাকার আনোয়ারা বেগমেরও একই অভিযোগ।

অমানবিক জীবন যাপন করছেন বলে জানালেন পূর্ব ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার বাসিন্দা সম্পা আক্তার।

তিনি বলেন, “কয়েক বছর ধরে পানিতে বসবাস করছি। বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। সব ভাড়াটিয়া চলে গেছে। আমরা যেভাবে জীবন যাপন করছি তা অমানবিক। কবে এই জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাব?”

নয়াপাড়া এলাকার পানি কিছুদিন আগে নামতে শুরু করলেও কদিনের বৃষ্টিতে আবার জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান এখানকার বাসিন্দা মোসলেম উদ্দিন।

তিনি বলেন, এ এলাকার অনেকের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে।

“ডুবন্ত রাস্তায় নালার ময়লা-আবর্জনা উঠে বৃষ্টি পানির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়। এখানে এক ঘন্টা বৃষ্টি হলেই রাস্তা ডুবে যায়। নিচু এলাকার সব বাড়িঘরে পানি ঢোকে,” বললেন নয়াপাড়ার পারভেজ মিয়া।

হাজীগঞ্জ, গিরিধারা, সাহেবপাড়া, বাঘমারা, সাদ্দাম মার্কেট, জালকুড়ি, হাজীনগর, মাতুইয়াল, শহীদ নগর, সবুজবাগ, ভুঁইঘর, দেলপাড়া, ডগাইর, মাতুয়াইল, সানারপাড়, টেংরা, কোদালদাহ, নয়াপাড়া ও ধনকুণ্ডার নিচু এলাকায় অনেক বাড়িরঘর ও রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, সবজিখেত, নার্সারিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক জলাবদ্ধতায় লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে বলে জানান।

দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “বহু আগে প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও তা এখনও শুরু হয়নি।”

অবিলম্বে প্রকল্পের কাজ শুরু করে সমস্যা সমাধানের দাবি জানান তিনি।

পাম্প দিয়ে এ এলাকার পানি সরানোর ব্যবস্থা থাকলেও পাম্প পুরনো হওয়ায় এবং অপরিকল্পি বাড়িঘর নির্মাণের পাশাপাশি খাল দখল ও কোথাও কোথাও আবর্জনায় বন্ধ হওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল পাম্পহাউজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল জব্বার বলেন, চারটি পাম্প দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে পানি নিষ্কাশন করা হয়।

“কিন্তু ৫১ বছরের পুরনো পাম্প হাউজের ৫১২ কিউসেক ক্ষমতার চারটি পাম্প এখন আর আগের মতো পানি নিষ্কাশন করতে পারছে না। পাম্পগুলোর ক্ষমতা ৩০-৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।”

তাছাড়া পাঁচ কিউসেক ক্ষমতার মোট ২২টি পাম্পের মধ্যে এখন মাত্র চারটি চালানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাকি ১৮টির সংস্কার কাজ চলছে।

সমস্যা সমাধানে নতুন প্রকল্প

ডিএনডি প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল আউয়াল জানান, ডিএনডি বাঁধের অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫৫৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

“সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এ বছর নভেম্বর নাগাদ কাজ শুরু হবে বলে আশা করা যায়। আর সেটা ২০২০ সালের জুন নাগাদ শেষ হওয়ার কথা।”

এই প্রকল্পে ছোট-বড় মিলিয়ে ৯৩ কিলোমিটার খাল দুখলমুক্ত ও পুনর্খন করার পাশাপাশি কালভার্ট, কজওয়ে, সেতু, ড্রেন, ওয়াটারওয়ে নির্মাণ ও মেরামত করা হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই প্রকল্পের সার্ভে, নকশা ও প্রাক্কলনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন কেবিনেটে অনুমোদন হলে আগামী নভেম্বরে সেনাবাহিনী প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠবে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া বলেন, প্রকল্পটির কাজ শিগগিরই শুরু হবে।

“প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিএনডি নান্দনিকরূপে রূপান্তরিত হবে। অর্থনেতিক কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে ডিএনডিবাসী।”