তার পালিত ছেলে রূপকুমার জানান, বুধবার রাত ১টা ১০ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা যান।
হরিপদ গত চার-পাঁচ মাস ধরে মূত্রনালীর অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তার প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়ত। তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসক দেখানো হচ্ছিল।
জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রত্যন্ত গ্রাম সদর উপজেলার আসাননগর গ্রামে নিজের বাড়িতে বসবাস করতেন হরিপদ।
১৯৯৬ সালে ধানের নতুন যে জাত তিনি উদ্ভাবন করেন, সেটাই পরে তার নামে ‘হরিধান’ নামে পরিচিতি পায়।
হরিধান একটি বিশেষ জাতের উচ্চফলনশীল ধান। ওই উদ্ভাবনের পর তার নাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাকে দেয় নানা পদক, পুরস্কার ও সম্মাননা।
স্থানীয় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে নিজের ধানের জমিতে একটি ধানের গাছ দেখতে পান হরিপদ, যা অন্য গাছের চেয়ে বেশি পুষ্ট এবং গোছায় শাখার সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।
তিনি ওই ছড়াটির ওপর নজর রাখেন। ধানের শীষ বের হলে দেখতে পান, সেগুলো অন্য গাছের চেয়ে দীর্ঘ, শক্ত এবং প্রতিটি শীষে ধানের সংখ্যা বেশি।
ধান পাকলে আলাদা করে বীজ রেখে দেন তিনি। পরের মৌসুমে সেগুলো আলাদা করে আবাদ করে আশাতীত ফলন পান। এরপর ওই ধানের আবাদ বাড়িয়ে চলেন।
প্রথমে ওই গ্রাম ও আশপাশের গ্রামের কৃষকরা তার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে হরিধানের চাষ শুরু কর। পরে অন্য জেলার কৃষকরাও বীজ সংগ্রহ করতে আসেন। এভাবে নতুন এই জাতের বিস্তার ঘটে এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নজরে আসে।
সাধারণত ধানে বিঘাপ্রতি ফলন যেখানে ১৫ মণ, সেখানে হরিধান ফলে ১৮ মণের বেশি।
হরিপদর স্ত্রী সুনীতি বিশ্বাস বলেন, “হরি ছিলেন নিরহঙ্কার, কাজের লোক। প্রায় সব সময় মাঠেই থাকতেন। কৃষক মানুষ, প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া জানতেন না। কিন্তু ফসলের উন্নয়নের চিন্তা করতেন সব সময়।”
হরিপদর ঘরে জেলা প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ঢাকা রোটারি ক্লাবসহ বিভিন্ন সংস্থার ১৬টি পদক দেখা যায়।
হরিপদর পুত্রবধূ সুষমা বিশ্বাস বলেন, “ঢাকায় নিয়ে তাকে অনেকবার সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।”
বাড়ির কাছে আলীয়াপুর শ্মশানঘাটে বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় যখন তাকে সমাহিত করা হয়, ঝিনাইদহের পৌরমেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, জেলা কৃষি সম্প্রসালণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহ মো. আকরামুল হকসহ স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
পালক ছেলে রূপকুমার ছাড়া হরিপদর আর কোনো সন্তান নেই।