ঘুল্লিয়া, বিনোদপুর ও তল্লাবাড়িয়া গ্রামে বৃহস্পতিবার এ হামলা চালানো হয়। হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
এ সময় বিভিন্ন বাড়িঘর থেকে টিভি, রিফ্রিজারেটর, কম্পিউটার, আসবাবপত্র, সোলার প্যানেল, নলকূপ, বিদ্যুৎচালিত মোটর, বাসনকোসন, রান্নার সামগ্রী, কাপড়চোপড়সহ সব মালামাল লুট করা হয়। জমির দলিল, পরীক্ষা পাশের সনদ এমনকি গাছের ফল পর্যন্ত বিনষ্ট করেছন হামলাকারীরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৬৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে বলে জানান মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম।
মহম্মদপুর থানার ওসি তরীকুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় এখনও কোনো পক্ষ মামলা করেনি।
মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, বৃহস্পতিবার বেথুলিয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে তিনি মাগুরা আদালতে যাচ্ছিলেন। মহম্মদপুর-মাগুরা সড়কের তল্লাবাড়িয়া এলাকায় পৌছলে ৪-৫ জন যুবক মোটরসাইকেল থামিয়ে তাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিঠ করে। লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
রাজনৈতিক বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন এই হামলা চালিয়েছে বলে মান্নানের অভিযোগ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আব্দুল মান্নান ও শিকদার মিজানুর রহমান কেন্দ্রের দুই নেতার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এলাকায় রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।
স্থানীয় আবুল হোসেন, শফিয়ার রহমানসহ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আব্দুল মান্নানের উপর হামলার ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ঘুল্লিয়া, বিনোদপুর ও তল্লাবাড়িয়া গ্রামে দিনভর ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা শতাধিক বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। একাধিক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ঘুল্লিয়া গ্রামের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে তানা জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘুল্লিয়া, বিনোদপুর ও তল্লাবাড়িয়া গ্রামে চারদিকে ব্যাপক ধ্বংসের চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম ঘুল্লিয়া। এই গ্রামে চেয়ারম্যান শিকদার মিজানুর রহমানের বংশের ও তার সমর্থক মানুষের বসবাস বেশি। এখানকার প্রায় সব বাড়িতে হামলা-ভাংচুর লুটপাট চালানো হয়েছে। কয়েকটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
তল্লাবাড়িয়া গ্রামের পাকা সড়কের সঙ্গে নঈম শিকদারের গেটওয়ালা পাকা বাড়িতে তিনটি ঘর ছিল। অবস্থাপন্ন পরিবার। এখন তার বাড়ির চারদিক শুধু ধ্বংসের চিহ্ন; ছাই আর কয়লা।
নঈম শিকদারের স্ত্রী রাশিদা খাতুন (৩৫) কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, তার স্বামী চেয়ারম্যান মিজানের চাচাত ভাই। এটাই তাদের ‘অপরাধ’। তাদের সবকিছু লুট করে বাড়িতে আগুন দিয়েছে। গোয়ালের চারটি গরু লুট করে নিয়ে গেছে। পানি খাওয়ার পাত্র পর্যন্ত রেখে যায়নি হামলাকারীরা।
তাদের বাড়িতে কোনো পুরুষ লোক নেই এখন।
ঘুল্লিয়া গ্রামের শুকুর শিকদারের একতলা বাড়িতে হামলাকারীরা ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছে। বেশকিছু মূল্যবান মালপত্র ভাঙাচোরা অবস্থায় চারদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বাড়িতে আছেন তার স্ত্রী ইতি শিকদার ।
ইতি শিকদার বলেন, “একদিন পর তিনি বাড়ি ফিরেছি। ঘরের সব লুট করে আগুন দেওয়া হয়েছে। এক কাপড়ে আছি। পরার একটা কাপড়ও নেই। পাশেই চেয়ারম্যান সিকদার মিজানুর রহমানের ঘর। তার ঘরেরও একই অবস্থা।”
স্কুল শিক্ষক ইদ্রিস আলী মোল্লা ঘুল্লিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মধুখালি উপজেলার কামারখালীর গয়েসপুর-বকশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্ত্রী রেবেকা বেগম বিনোদপুর ইউনিয়নের পরিবার কল্যাণ সহকারী।
ইদ্রিস আলী মোল্লা বলেন, তিনি সক্রিয় রাজনীতি করেন না। তবে আওয়ামী লীগের সমর্থক। ছেলেরা সবাই বাইরে পড়ালেখা করে। শুধু সমর্থক হওয়ায় তার সাজানো পরিবারটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এখন আর কিছুই নেই।
বিনোদপুরের ক্ষতিগ্রস্ত মনিরুল বাজনদার, ঘুল্লিয়ার বাসিন্দা বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর মোল্লা এবং লুট হয়ে যাওয়া মুদি দোকানদার সালাম মোল্লা বলেন, গ্রামের ১০০ পরিবারের নারী-শিশুরা রয়েছে আতঙ্কের মধ্যে। এখনও স্বাভাবিক হতে পারেনি আওয়ামী লীগের সমর্থক পরিবারগুলো। পুরুষেরা ফিরতে পারছে না বাড়িঘরে।
তল্লাবাড়িয়া গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল মালেক বলেন, “নেতারে মারছে আরাক নেতার লোক। বাড়ি পুড়াচ্ছে লুট করতেছে আামাগের। আমরা কি মারামারি করতি গিছি? তারা নিজিরাই মারামারি করতেছে, অন্য কোনো দল তো আসিনেই।”