কেউ তাদের দেখতে আসেনি

স্বজনদের ছাড়াই ঈদ কাটালেন গাজীপুর সদর উপজেলার বিশিয়া-কুড়িবাড়ি বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের কয়েকজন নিবাসী।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2017, 02:43 PM
Updated : 28 June 2017, 11:51 AM

ঈদে পুনর্বাসন কেন্দ্রে থেকে সেমাই, পোলাও, মাংসসহ বিভিন্ন ধরনের বিশেষ খাবার এবং নতুন জামা-কাপড় পেলেও স্বজনদের কেউ খোঁজ নেয়নি। এরপরও ছেলে-মেয়েদের মঙ্গল কামনা করেছেন তারা।

বুধবার গাজীপুর সদরের মনিপুরে বিশিয়া-কুড়িবাড়ি (বি-কে বাড়ি) বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক কমিউনিকেশন কর্মকর্তা ইয়াকুব হোসেন খান (৮৩)। এ বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করছেন পাঁচ মাস ধরে। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদরে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। প্রায় ২০ বছর ধরে বড় ছেলে নিখোঁজ, স্ত্রীও মারা গেছেন। ছোট মেয়ে ঢাকায় এবং অন্যরা চাঁদপুরে থাকেন। এতদিন ছোট মেয়ের সঙ্গে ছিলাম।

“পাঁচ মাস আগে ছোট মেয়ে আমাকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে এখানে দিয়ে গেছে, কয়েকমাস আগে ছোট ছেলে বিদেশ থেকে ফিরে এসেছে। কেউ কোনোভাবেই আমার খোঁজ নেয় না, ঈদেও খোঁজ নেয়নি। সবাই থেকেও আমার কেউ নেই। ওরা সুখে থাক। ওরা যেন অশান্তিতে না থাকে।”

নয় বছর ধরে এ নিবাসে অবস্থান করছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কাটরা গ্রামের জরু মিয়া ওরফে সূর্য মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৮০)।

তিনি বলেন, ২০ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। একমাত্র মেয়ে জরিনার বিয়ে হয়ে গেছে, আর ছেলে রতন মিয়া কাঠমিস্ত্রী। নিজেদের কোনো জমিজমা নেই।

“ছেলের অভাবের সংসার; তাই ছেলে আমাকে এখানে দিয়ে গেছে। এরপর থেকে ছেলে আর আমাকে দেখতে আসে নাই, ঈদেও না। সে কেমন আছে তাও জানি না।”

ছেলের মঙ্গল কামনা করে ফরিদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে ভালো আছি। কোনো কিছুর চিন্তা নেই। আশ্রম থেকে নতুন কাপড় পেয়েছি। সকালে এখানে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সেমাই, মুড়ি, পোলাও মাংশ খেয়েছি।

“একবার যদি জরিনার মুখটা দেখতে পেতাম, কদিন আর বাচঁব। আমাদের মতো দুর্ভাগাদের কি আর খোঁজ নিবে কেউ! মরলে লাশও নেবে না তারা।”

এমন অবস্থা যেন আর কারও না হয়- কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন অশীতিপর ফরিদা।

চার বছর আগে স্বামী ও পরের বছর একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে বি-কে বাড়ি ওঠেন গোপালগঞ্জের আরিফা বেগম (৭০)।

“আমার তিনভাই এখনও বেঁচে থাকলেও কেউ খোঁজ নেন না। তবে এ প্রতিষ্ঠান আমার সব ভরণ-পোষণ করছে। ঈদে নতুন কাপড় দিয়েছে। ভালো খাবার-দাবার খেয়ে আনন্দেই ঈদের দিনটি কেটেছে।

“ঈদের দিন যদি ভাইদের কেউ আসত। স্বামী বেঁচে থাকলে কি আজ এ দশা হতো! খেতে না পারলেও বাড়ির বাইরে থাকতে হতো না। ভাইরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখে থাকুক।”

বি-কে বাড়ি বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আবু শরীফ জানান, বিশিয়া-কুড়িবাড়ি মৌজায় ৭২ বিঘা জমি নিয়ে ১৯৯৪ সালে পুনর্বাসন কেন্দ্রটির যাত্রা শুরু।কেন্দ্রটিতে বর্তমানে ২১০ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছেন। ঈদে ৩০ জন বৃদ্ধ এবং ৩২ জন বৃদ্ধা ১০ দিনের ছুটি নিয়ে তাদের স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গেছেন।

“ঈদে পুরুষদের পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, ফতুয়া, শার্ট এবং নারীদের শাড়ি, থ্রিপিস, ম্যাক্সি দেওয়া হয়েছে। ঈদের দিন সকালে সেমাই মুড়ি, খিচুড়ি, দুপুর ও রাতে পোলাও, সাদা ভাত, গরুর মাংশ, মুরগির মাংশ, মাছ পরিবেশন করা হয়েছে।”

ঈদের দিন নিবাসে অবস্থানকারী ছয়জনের স্বজনরা দেখা করতে এসেছিলেন। বুধবার দেখা করতে এসেছেন কয়েকজন, বলেন শরীফ।