ঈদের ছুটিতে ভরপুর সিলেট

ঈদের ছুটিতে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে বরাবরের মতো এবারও দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে এসেছেন সিলেটে।

মঞ্জুর আহমদ সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2017, 11:35 AM
Updated : 27 June 2017, 12:11 PM

পুরো জেলাজুড়ে প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের কমতি নেই। সারিবদ্ধ চা বাগান, সবুজের সমারোহ, উঁচু-নীচু পাহাড়-টিলা, গহীন অরণ্য, স্বচ্চ নীলজল স্রোতস্বিনী আর ঝর্নাধারা এ জেলাকে সবার কাছে আকর্ষণীয় করেছে।  

জাফলং, বিছনাকান্দি, খাসিয়াপুঞ্জি, লোভাছড়া, লালাখাল, পানতুমাই ঝর্না ও রাতারগুল বরাবরই ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে খুবই প্রিয়। 

এছাড়া নগরীতে রয়েছে হযরত শাহজালাল (র.) ও শাহপরাণ (র.) এর মাজার।

সারাবছরই এসব দর্শনীয় স্থানে পর্যটকের ভিড় তাকে। তবে ছুটির দিনগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে লোক সমাগম বেশি হয়।

এবারও তার ব্যতিক্রম নেই। সব বয়সী মানুষ ভিড় করেছে পর্যটন স্পটগুলোতে।

উঁচু পাহাড়, স্বচ্ছ জল, রকমারী নুড়ি পাথরের সমন্বয়ে গড়া আসাম সীমান্তবর্তী এলাকা জাফলং। সিলেট নগরী থেকে দূরে হলেও একটু প্রশান্তির জন্য অনেকে ছুটে আসেন এখানে।  

এপারে জাফলং, ওপারে ভারতীয় পাহাড় ডাউকি থেকে অবিরাম ধারায় বহমান জলপপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি সেতু। রয়েছে পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জল।

সিলেট বিভাগীয় হোটেল ও গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তাহমিন আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিলেট বিভাগে পাঁচ শতাধিক হোটেলে কম-বেশি ৩৫ হাজারের মতো লোক থাকতে পারে। ঈদে তাদের প্রতিটি হোটেলের সব কক্ষ ভাড়া হয়ে যায়, এবারও যার ব্যতিক্রম হয়নি।

তিনি জানান, গত বছরও ঈদে পর্যটকের সংখ্যা এরকমই ছিল। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে হোটেল গেস্ট হাউসগুলোতে ২০ হাজারের মতো লোক আসে।

ঢাকা থেকে আসা মোশারফ করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাফলং এক কথায় অসাধারণ। পাহাড়ি ঝর্নাধারা, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জল যে কারও মন ভোলাবে। আমি মুগ্ধ।”

জাফলংয়ের পথেই যাওয়া যায় লালাখাল। যেতে হবে স্পিডবোটে। নদীর স্বচ্ছ পানিতে নৌকাভ্রমণ, আর লালাখাল পর্যটন স্পটে ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতি যে কারও জন্য হবে অসাধারণ। 

মিঠাপানির জলার বন রাতারগুলে বর্ষায় ৮-১০ ফুটের মতো পানি থাকে; শীতে শুকিয়ে যায়।

এ বনে হিজল, করচ, বনজাম, জংলিবট আর মুরতা নামের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের ছড়াছড়ি। জলমগ্ন গাছগুলো যেন গলাগলি করে থাকে। গাছের ডালপালা ছাপিয়ে যাওয়া লতা-গুল্ম মিলে বিশাল এক সবুজ চাঁদোয়া গড়ে তোলে।

রাতারগুলে ঘুরে বেড়ানোর বাহন নৌকা। ডিঙি নৌকায় চড়ে জল আর বনের অপরূপ সৌন্ধর্য উপভোগ করেন পর্যটকরা।

ঈদের ছুটিতে এখানে এসেছেন বগুড়ার আনাস হাবিব।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটি অনেকটা সুন্দরবনের মতো। নৌকায় চড়ে ভাসমান বনের সৌন্ধর্য বিমোহিত করে সবার মন।

পাহাড়, পাথর আর নদীর মিতালী দেখতে সিলেটের গোয়াইনঘাটের বিছনাকন্দিতেও বেড়েছে পর্যটকদের আনাগোনা।

ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা জলের স্রোতে ভেসে আসছে পাথর। পাথর ছুঁয়ে জল গড়িয়ে মিশে যাচ্ছে পিয়াইন নদীতে। সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য।

এখানে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা খুলনার সামসুদ্দোজা বলেন, রাস্তাঘাট খারাপ থাকায় আসতে কিছুটা কষ্ট হলেও পাথরের বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সব কষ্ট যেন চলে গেল। অসাধারণ জায়গা। বারবার আসতে মন চাইবে যে কারও। পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি। খুব খুশি সবাই।

সিলেটের পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে পর্যটকরা এসেছেন। তাদের নিরাপত্তায় প্রায় পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।