টুপি বুনে স্বাবলম্বী ধুনটের নারীরা

সুতা ও ক্রুসকাঁটা দিয়ে টুপি বুনে চলেছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার নারীরা; এ টুপি এনে দিয়েছে তাদের সংসারে সচ্ছলতা।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2017, 12:38 PM
Updated : 24 June 2017, 12:38 PM

এক সময়ে যে নারীরা সংসারের কাজকর্ম সেরে বাকি সময় পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্প গুজবে কাটাতেন; তারাই এতটা ব্যস্ত যে কারো সঙ্গে কথা বলার ফুসরৎটুকুও পাচ্ছেন না।

ঈদকে সামনে রেখে এই ব্যস্ততা আরও বেড়ে গেছে। টুপি তৈরির কাজে শুধু গৃহবধূরাই নন ব্যস্ত স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েরাও।

টুপি সেলাই কাজে ব্যস্ত নারীরা জানান, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সময়ে টুপির চাহিদা বেশি থাকে। তাই ঈদের আগে থেকেই তারা টুপি সেলাইয়ের কাজে বেশি সময় ব্যয় করছেন।

তারা বলেন, বোনার কাজে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় সুতা ও ক্রুসকাঁটা, যা পাইকাররা সরবরাহ করে থাকেন। ২৫ টাকায় কাঁটা এবং ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে সুতা পাওয়া যায়।

কারো টাকা না থাকলে বাকিতেও কাঁচামাল যোগান দেন তারা। টুপি বিক্রির করার সময় কাঁটা ও সুতার দাম পাইকার কেটে রাখেন বলে জানান এ নারীরা।

ধুনট উপজেলার ২২১টি গ্রামের প্রায় ৮০ হাজার নারী এ টুপি তৈরিতে ব্যস্ত। তাদের হাতে বোনা টুপি দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির পাশাপাশি সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, কুয়েত, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে রপ্তানিও হচ্ছে।

উপজেলার চৌকিবাড়ী গ্রামের মোমেনা খাতুন বলেন, “ছেলের বাবার একলার কামাই দিয়া আগে আমাগোরে খুব কষ্টে দিন যাচ্ছিল। কিন্তু এখন আর তেমন কোনো কষ্ট করতে হচ্ছে না।”

তিনি জানান, ৫/৬ বছর আগে থেকে টুপি তৈরির কাজ শুরু করেন। ঘর-গৃহস্থীর কাজ শেষে দিনের যেটুকু সময় পান সেই সময়েই প্রতিদিন ৩/৪টা টুপি বানাতে পারেন।

“টুপি বিক্রি করতে কোনো হাটে বাজারে যেতে হয় না। বাড়ি থেকেই পাইকাররা প্রতি সপ্তাহে কিনে নিয়ে যান। সব খরচ বাদে প্রতিমাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা আয় হয়।”

শুধু মোমেনা নন ওই গ্রামের গৃহবধূ লাকি, সনি, কুলসুম, রানু, পারুলসহ আরও অনেকেই টুপি বুনে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।

উপজেলার মহিশুরা ইউ এ কে উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সমাপ্তী খাতুন ও জেসমিন আকতার। লেখাপড়ার পাশাপাশি মায়ের কাছে টুপি বানানো শিখে তৃতীয় শ্রেণি থেকে টুপি তৈরি করছে।

টুপি বানিয়ে প্রতিমাসে ৪০০/ ৫০০ টাকা আয় হয়। লেখাপড়ার খরচ বাবা মার কাছ থেকে নিতে হয় না বলে জানান এ দুই কিশোরী।