‘চালক ঘুমাচ্ছিলেন, ট্রাক চালাচ্ছিলেন সহকারী’

ঈদযাত্রার পথে রংপুরে সিমেন্টের যে ট্রাক উল্টে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেই গাড়ির চালক তার সহকারীর হাতে স্টিয়ারিং ছেড়ে ঘুমাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

রংপুর প্রতিনিধিশাহজাদা মিয়া আজাদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2017, 12:09 PM
Updated : 24 June 2017, 12:09 PM

তারা বলছেন, সহকারীকে গতি কমাতে বলা হলেও তাতে কান দেননি তিনি।

শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জে কলাবাড়ি এলাকায় গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ট্রাকটি উল্টে গেলে ১৬ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন আরও ১১ জন।

রানা ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ওই ট্রাক ৮৯ বস্তা সিমেন্ট নিয়ে লালমনিরহোটের কালীগঞ্জে যাওয়ার পথে গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে ৫৪ জন যাত্রী তোলে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই বিভিন্ন পোশাক কারখানার কর্মী।

হতাহতদের বেশির ভাগের বাড়ি লালমনিরহাট জেলায়; কুড়িগ্রাম, ঝিনাইদহ ও ময়মনসিংহেরও কয়েকজন রয়েছেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন খলিলুর রহমান জানান, তিনি জয়দেবপুরে প্রাণের ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা ঈদ করার জন্য বাড়ি ফিরছিলাম। যমুনা সেতুতে আসার পর ট্রাকের ওজন মাপার সময় সবাই নেমে পড়ি। ওজন মাপার পর আবার উঠি। তখনই মনে হচ্ছিল চালক ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।”

তিনি জানান, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর মোড়ে গাড়ি থামিয়ে চালককে তিনবার চোখে পানি দিতে দেখেন তারা। এরপর রংপুরের পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে ২০ জন যাত্রীকে নামিয়ে দিয়ে চালক তার সহকারীর হাতে গাড়ির দায়িত্ব ছেড়ে পাশের সিটে ঘুমিয়ে পড়েন।

“পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে আসার পর হঠাৎ ট্রাকের গতি বেড়ে যায়। আমরা চিৎকার করে আস্তে চালাতে বলি। কিন্তু সে কিছুতেই আমাদের কথা শুনছিল না। একপর্যায়ে ট্রাক রাস্তার পাশে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়।”

এ দুর্ঘটনায় নিজে বেঁচে গেলেও চাচাত ভাই মজনু (২২) ও ফুফাত দুলাভাই কোহিনূর ইসলামকে (৪০) হারিয়েছেন খলিল।

তিনি জানান, যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কাজ করেন। কয়েকজনের সঙ্গে তার আগে থেকেই পরিচয় ছিল।

নিহত কোহিনূরের স্ত্রী রীনা বেগমও ওই ট্রাকে করে বাড়ি যাচ্ছিলেন। তিনিও এখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রীনা বলেন, “পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে নেমে সবাই চা-পানি খেয়েছে। পরে চালক সহকারীকে বলে, আমার ঘুম পাচ্ছে, তুই একটু আস্তে আস্তে চালা।”

পীরগঞ্জের বড়দরগাহ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই হাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন তিনজনের সঙ্গে কথা বলে তিনি একই তথ্য পেয়েছেন।

“চালকের বদলে তার সহকারী ট্রাকটি চালাচ্ছিল বলে জানা গেছে। এক পর্যায়ে সহকারীও ঘুমিয়ে পড়ায় গাড়ির গতি আর নিয়ন্ত্রণে থাকেনি।”

রংপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, এ দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে বিআরটিএর রংপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল কুদ্দুসকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া লাশ বহন ও দাফনের জন্য নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার করে এবং আহতদের পরিবারকে পাঁচ হাজার করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।