ঈদের সরকারি ছুটি শুরুর আগে বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবস হওয়ায় অফিস করে অনেকেই বাড়ির পথ ধরেন। এ কারণে রাতে চাপ থাকলেও শুক্রবার সকাল নাগাদ রাস্তাঘাট ফাঁকা হতে শুরু করে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
গাজীপুর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বাসের সংখ্যা বাড়লেও শুক্রবার সকালে বাস তুলনামূলক কম দেখা গেছে। ট্রাক ও ভারী যান চলাচলের পাশাপাশি অনেককেই বাস না পেয়ে ট্রাকে যেতে দেখা গেছে।
শরীফপুর এলাকার রোটেক্স পোশাক কারখানার শ্রমিক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভোগড়া বাইপাস বাসস্ট্যান্ডে এসে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন।
“বেলা সাড়ে ১০টার দিকেও কোনো বাসে চড়তে পারিনি। পরে ট্রাকে রওনা হচ্ছি।”
কোনাবাড়ী হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ হোসেন সরকার জানান, তিনি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রায় দায়িত্ব পালন করছেন।
“বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে চন্দ্রা, সফিপুর, কোনাবাড়ি ও আশপাশের এলাকায় শুক্রবার ভোর পযন্ত গাড়ির চাপ বেশি ছিল। সেই তুলনায় সকালে বাস ও অন্যান্য গাড়ির সংখ্যা কম।”
একই তথ্য জানালেন নাওজোর মহাসড়ক পুলিশ ফাঁড়ির ওসি আব্দুল হাই।
তিনি আরও বলেন, “বাস না থাকায় অনেককেই রাস্তার পাশে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অনেকেই ট্রাক, পিকআপ বা বিকল্প পরিবহনে করে চলে যাচ্ছে।”
সেহরি খাওয়ার পর অনেকেই শুক্রবার ভোরে বাড়ির পথে রওনা হওয়ায় ভোরে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও সকাল নাগাদ রাস্তা ফাঁকা হয়ে আসে বলে পুলিশ মনে করছে।
মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত দুই দিনে যেসব গাড়ি যাত্রী নিয়ে উত্তরে গেছে তারা এখনও ঢাকায় ফিরতে পারেনি বলেও গাড়ির সংখ্যা কিছুটা কম।
গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাসে হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, বাসের অপেক্ষা করছেন আগাম টিকেট কাটা যাত্রীরা। নতুন করে কেউ টিকেট পাচ্ছে না।
১২ জুন আগাম টিকেট বিক্রি শুরুর কদিনেই শেষ হয়ে যায় বলে জানান কাউন্টারে টিকেট মাস্টার শাহদত হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে গাজীপুরে আসতে যানজটে পড়ে গাড়ির শিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। এ কারণে প্রতিটি গাড়ি ছাড়তে দুই-তিন ঘণ্টা দেরি হচ্ছে।
গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা, কোনাবাড়ি, চন্দ্রাসহ বিভিন্ন স্পটে শত শত যাত্রীকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
ভোগড়া বাইপাসে সপরিবার অপেক্ষায় থাকা কামাল হোসেন বলেন, অন্য সময় বাইপাস থেকে তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁর রানীনগরে বৃষ্টি পরিবহনে যেতে ৩০০-৪০০ টাকা ভাড়া লাগত।
“আজকে তারা সেখানে ১০০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে।”
এ বিষয়ে বৃষ্টি পরিবহনের টিকেট মাস্টার সুমন মিয়া বলছেন, “ঈদের সময় মাঝপথে নওগাঁর যাত্রী তুলছি না। যারা উঠছেন তারা শেষ স্টপেজ পঞ্চগড়ের ভাড়া দিয়ে উঠছেন।”
ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে গাড়ি চলছে থেমে থেমে
অতিরিক্ত চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের কোনো কোনো জায়গায় গাড়ি চলছে ধীরগতিতে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মির্জাপুরের ধেরুয়া রেলক্রসিং, রসুলপুর, এলেঙ্গা, গোড়াই, সুভল্লা, করটিয়া, পাকুল্লায় খানাখন্দের কারণে থেমে থেমে চলছে যানবাহন। তবে কোথাও কোথাও কোনো জট নেই।
টাঙ্গাইলের প্রায় ৬২ কিলোমিটার রাস্তা ছয় ভাগে ভাগে করে আট শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এছাড়া ৪৫টি মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করছে। কোনো যান দুর্ঘটনায় পড়লে দ্রুত সরানোর জন্য তিনটি রেকার প্রস্তুত রয়েছে।
এ সড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ খুলনা বিভাগেরও কয়েকটি জেলার যান চলাচল করছে।
এদিকে চার লেইন প্রকল্পের কাজ বৃহস্পতিবার থেকে ঈদ উপলক্ষে বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম নূর-এ-আলাম।
গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি মো. খলিলুর রহমান বলেন, সেহরি খাওয়ার পর অনেকেই শুক্রবার ভোরে বাড়ির পথে রওনা হয়ে গেছে। এ কারণে ভোর পর্যন্ত গাড়ির চাপ ছিল বেশি। সকাল থেকে তেমন চাপ নেই।
“অনেকেই বৃহস্পতিবারই চলে গেছেন। গত দুই দিনে যেসব গাড়ি যাত্রী নিয়ে উত্তরের পথে গেছে সেসব এখনও ঢাকায় ফিরতে পারেনি। হয়ত এ কারণে মহাসড়কে গাড়ির সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে।”
উত্তরের বিপদ নলকা সেতু
বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে উত্তরের পথে গাড়ি চলছে থেমে থেমে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি মোহাম্মদ দাউদ বলেন, গাড়ির চাপ বেশি থাকায় থেমে থেমে চলছে।
“তাছাড়া সেতু থেকে ১৮ কিলোমিটার পশ্চিমে পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতুতে ধীরে চলার কারণে এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।”