ভাঙনের মুখে রয়েছে স্কুল, মসজিদ, মন্দির, বাজারসহ প্রায় দেড়শ বাড়িঘর।
বুধবার সরজমিন তৈয়বখাঁ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গাবুরহালান, মাজা পাড়া, রতি মৌজা, তৈয়বখাঁ, সোমনারায়ণ, রতিদেব গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে ভাঙন। তিস্তা নদী এসব এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভাঙন কবলিতদের নিরাপদ জায়গায় ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।
মুদি দোকানদার আব্দুর রহিম বলেন, “হামারগুলার ঈদ এবার শ্যাষ বাহে। তিস্তায় আবাদ-কিস্তি, বাড়িঘর সউগ খায়া নিছে। লোকগুলার থাকপের জায়গা নাই, ঈদ করমো কীভাবে!”
এই এলাকার রতি, সোলাগারী পশ্চিম মাথার বাসিন্দা আইজার রহমান (৬৫) ও হালিমা খাতুন (৪২) পাঁচ থেকে সাত বার বাড়ি স্থানান্তর করেছেন। তবু নদী যেন তাদের পিছু ছাড়ছে না। বাড়িঘর নিয়ে কোথায় যাবেন এ চিন্তায় তারা অস্থির!
মসজিদের মোয়াজ্জেম আব্দুল হাই (৬৬) বলেন, “দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই মসজিদে আজান দিয়ে আসছি। কতজন এল-গেল কিন্তু কাজের কাজ কেউ করল না। এই বৃষ্টি-বাদলার দিনে সরকারিভাবে নদীর গভীরতার চেয়ে কম দৈর্ঘ্যরে বাঁশ দিয়ে পাইলিং দিচ্ছে। এগুলা দিয়ে কিচ্ছু হবে না।
দিনমজুর আজিজুল ইসলাম ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য ঘর সরিয়ে স্কুলের মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। তৈয়বখাঁ বাজারের পাশে ৬টি বাড়ি, ৫টি দোকান এরই মধ্যে ভেঙে গেছে বলে জানান তিনি।
গত কয়েক দিনে নুরজামাল, সুরতজামাল, রফিকুল বাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। নদীর ধারে অবস্থিত ঘরবাড়ি অনেকে সরাতে পারছে না জায়গার অভাবে।
এদের মধ্যে দিনমজুর রেজাউল বলেন, “আমার বাড়ি-ঘর ভাঙি যাচ্ছে। ঘর তোলার জাগা নাই। কেউ জাগা দেয় না। যার বাড়ি যাই, কয় আমার জাগা নাই। এখন পরিবার নিয়া ঢাকা যাওয়া ছাড়া উপায় নাই।”
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ভাঙন কবলিত তৈয়বখাঁর ২৫০ মিটার এলাকায় অস্থায়ী তীর প্রতিরক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে পাইলিং ও জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলমান রয়েছে।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ইউনিয়নের সত্তরভাগ এলাকায় ভাঙনে শতশত বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এবার তৈয়বখাঁ এলাকার হাট-বাজার, স্কুল, মসজিদ-মন্দিরসহ ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার অবস্থা হয়ে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। পাওয়া গেছে ৬০ লাখ টাকা। এছাড়াও গতবছর পাওয়া গেছে ৭ কোটি টাকা। এসব অর্থ দিয়ে জেলার ১০টি স্পটে কাজের জন্য দরপত্রের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।