ভোলায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি

টানা ভারী বর্ষণে ভোলার মনপুরা ও তজুমদ্দিন উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।

আহাদ চৌধুরী তুহিন ভোলা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2017, 06:00 PM
Updated : 12 June 2017, 06:02 PM

সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে রোববার থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে। ভোলা সংলগ্ন মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী উত্তাল রয়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩/৪ ফুট উঁচুতে প্রবাহিত হচ্ছে।

প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানায়, জোয়ারের পানির চাপে মনপুরা উপজেলার মনপুরা ইউনিয়নের চৌমহনী বাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের ভাঙা বেড়ীবাঁধ, হাজির হাট ইউনিয়নের পূর্ব সোনার চরের ভাঙা বেড়ীবাঁধ দিয়ে এবং তজুমদ্দিন উপজেলার চৌমুহনী পয়েন্ট দিয়ে পাউবোর বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। শতাধকি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। মনপুরা ইউনিয়নের পশ্চিম কুলাগাজী তালুক, কাউয়ারটেক চৌমহনী গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ড, পূর্বকুলাগাজির তালুক, হাজির হাট ইউনিয়নের পূর্ব সোনারচর, চরযতিন, চরজ্ঞান, চরমরিয়ম, দাসেরহাট গ্রাম প্লাবিত গেছে।

এছাড়া কলাতলীচর, ঢালচর, চরনিজাম, চরশামসুউদ্দিন চরের চারপাশে কোনো বেড়ীবাঁধ না থাকায় অস্বভাবিক জোয়ারের পানিতে এসব চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব স্থানে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।

সোমবার এসব এলাকায় সরজমিনে দেখা গেছে, প্লাবিত এলাকার মানুষের বসতভিটা পানির নীচে ডুবে আছে। রাস্তার উপর দিয়ে জোয়ারের পানি যাচ্ছে। উঠানে ময়লা আবর্জনা ভাসছে পানিতে। বসতভিটা ডুবে থাকায় রান্নাবান্না করা যাচ্ছে না। ঘর থেকে কোথাও বের হওয়া যাচ্ছে না। চারদিকে শুধু থৈ থৈ পানি আর পানি।

গবাদি পশুগুলো উঠানের উঁচু জায়গায় রাখা হয়েছে। রাস্তার উপর কেউ কেউ জাল দিয়ে মাছ ধরছে।

সোনারচরের আবুল কাশেমের স্ত্রী রেহানা বেগম বলেন, “রাতে জোয়ারের পানিতে ঘর ডুবে গেছে। চৌকির উপর ছেলেমেয়েদের নিয়ে সারারাত বসে কাটিয়েছি। রান্নাবান্না করার মতো অবস্থা ছিল না। ছেলেমেয়েয়েরা রাতে উপোস ছিল। আমরা না খেয়ে রোজা ধরেছি।”

পানিবন্দি হাজির হাট ইউনিয়নের ১ নম্বর পূর্ব সোনার চরের মনুরা খাতুন বলেন, “জোয়ারের পানিতে ঘর ডুবে যাওয়ায় বাচ্চাদের জন্য রাতের খাবার রান্না করতে পারিনি। সারারাত আমার বাচ্চারা উপোস ছিল। আমরা ঘরের মধ্যে চৌকির উপর সারারাত বসেছিলাম। সকালবেলা টিন দিয়ে চুলা তৈরি করে রান্না করেছি।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলায় ভাঙা বেড়ীবাঁধ সংস্কার না করায় মানুষের এমন দুর্ভোগ হচ্ছে। আবার যেসব নতুন বেড়ীবাঁধ করা হয়েছিল তাও পানি উন্নয়ন বোর্ড সঠিকভাবে তদারকি করেনি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

হাজির হাট ইউনিয়নের চর যতিন গ্রামের আলাউদ্দিন আজাদ বলেন, জোয়ারের পানি ঢুকে পুকুরের সব মাছ চলে গেছে। আশপাশের সকল বাড়ির পুকুর ডুবে গেছে। এখন মহিলারা জোয়ারের পানি দিয়ে রান্নাবান্না করেন।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, ভাঙা বেড়ীবাঁধ দিয়ে ভিতরে পানি প্রবেশ করে মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। তবে তিনটি পয়েন্টে রিং বেড়ীবাঁধের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে।

শিপন চৌধুরী বাড়ির পূর্বপাশের ভাঙা বেড়ীবাঁধ, কাউয়ারটেক চৌমহনী বাজারে পশ্চিম পাশের ভাঙা বেড়ীবাঁধ ও নাইবেরহাট সংলগ্ন পশ্চিম পাশের ভাঙা বেড়ীবাঁধের সামনে ১০ ফুট চওড়া ও ১০ ফুট উচ্চতার রিং বেড়ীবাঁধের কাজ দ্রুত শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

“হাজির হাট ইউনিয়নের পূর্বসোনারচর ভাঙা বেড়ীবাঁধের টেন্ডার করার অনুমতি পেয়েছি। আশা করছি তা দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। চরাঞ্চলগুলোতে বেড়ীবাঁধ নেই। আমরা এ বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে  অবহিত করেছি।”

মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ হাওলাদার বলেন, “ভাঙা বেড়ীবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। আমি খবর পেয়ে দ্রুত পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করি। বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করেছি।” 

তজুমদ্দিন উপজেলার স্থানীয় সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন সোমবার বিকালে নিজের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেছেন, সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের চাপে ভোলা সদরের রাজাপুর, ইলিশা, কাচিয়া, দৌলতখানের কিছু অংশের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে মনপুরা ও তজুমদ্দিনের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

তিনি বলেন, কোনো কোনো জায়গায় দুর্বল বেড়ীবাঁধ জোয়ারের চাপে ভেঙে যাচ্ছে। পাউবোকে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের (পিআইও) ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।