লংগদু হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি

রাঙামাটির লংগদুতে পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে ‘খাগড়াছড়ি ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ কমিটি।’

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2017, 10:26 AM
Updated : 12 June 2017, 10:26 AM

সোমবার সকালে শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে তদন্ত কমিটির সঙ্গে ছয় দফা দাবিও জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ কমিটির সদস্য চঙ্চুমনি চাকমা বলেন, লংগদু হামলার উস্কানিদাতাদের বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা, হামলা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াসহ একজন অবসরপ্রপাপ্ত বিচারপতিকে প্রধান করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।

সেইসঙ্গে নিজের জায়গায় জুম্ম জনগণকে নিরাপদে ও নির্ভয়ে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তাসহ অংশগ্রহণমূলক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও জীবন এবং সম্পদের নিরাপত্তা, লংগদু ঘটনা শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের অপরাধ উন্মোচনের ব্যবস্থা, ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে নিজ জায়গায় পুনর্বাসন এবং এ ধরণের হামলা যেন আর না হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।

গত ১ জুন খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইল (কৃষি গবেষণা এলাকা সংলগ্ন) এলাকায় রাঙামাটির লংগদু সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়নের লাশ পাওয়া যায়। তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন।

এর জের ধরে পরদিন সকালে নয়নের লাশ নিয়ে মিছিল থেকে লংগদু উপজেলা সদরে পাহাড়িদের কয়েকটি গ্রামে হামলা ও কয়েকশ বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লংগদু উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি থেকে দুই চাকমা যুবককে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পরে দীঘিনালার মাইনী নদী থেকে নয়নের মোটরসাইকেলটিও পাওয়া যায়।

চঙ্চুমনি চাকমা বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে আলোচনা করে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের কারণ জানার চেষ্টা করেছি। সেইসঙ্গে আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি।

“ঘটনাস্থল ঘুরে ও ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি যে, কয়েক ঘণ্টা ধরে পাহাড়ি গ্রামে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে এবং প্রশাসন আক্রমণকারীদের কোনো বাধা দেয়নি।

“উল্টো সেনাবাহিনী একটি দল হামলাকারীদের পাশে বা সঙ্গে সঙ্গে ছিল এবং তাদের ভূমিকা হামলাকারীদের প্ররোচনার মতো ছিল বলে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন।”

তিনি বলেন, “হামলাকারীদের হাতে গান পাউডার, বোতলে বহনযোগ্য দাহ্য পদার্থসহ আগুন লাগানোর উপাদান ছিল বলেও ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন।এতো দ্রুত তিনটি গ্রামের বড় বড় বিল্ডিং ও মাটির গুদাম পুড়ে যাওয়ায় এ অভিযোগের সত্যতা প্রাথমিকভাবে অনুমান করতে পারি।”

কমিটির আহ্বায়ক ও পানছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা বলেন, অবস্থাপন্ন গ্রামবাসীসহ পাহাড়ি জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার জন্য এই ধরণের হামলা বার বার করা হয়।  

বেশ কয়েকবছর অন্তর অন্তর পাহাড়িদের বিভিন্ন গ্রামে খুবই পরিকল্পিতভাবে এই ধরণের সহিংসতা উস্কে দেওয়া হচ্ছে যা পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করে অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যই হয়ে থাকে বলে অভিযোগ করেন এ জনপ্রতিনিধি।

সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সদস্য সুপার জ্যোতি চাকমা, কমিটির সদস্য সচিব ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রনিক চাকমা ও ধিমান খীসা উপস্থিত ছিলেন।