জাবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি 

সড়ক দুর্ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র নিহতের পর কয়েকটি দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2017, 10:11 AM
Updated : 4 June 2017, 10:14 AM

এ দাবিতে রোববার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ’-এর ব্যানারে তারা মানববন্ধন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস এর সঞ্চালনায় মানবন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ ও ‘প্রহসনমূলক’ উল্লেখ করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এ সময় বক্তারা উপাচার্যের বাসভবনে ভাংচুরের ঘটনা হঠাৎ করে হয়নি উল্লেখ করে বলেন, এটা সারাদিনের ঘটনার পর্যায়ক্রমিক ফল।

ছাত্ররা কোনো অন্যায় করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে বিচার করতে হবে; কিন্তু মামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে তারা মনে করেন।

এছাড়া ঘটনার দিন উপাচার্যের বাসভবনে উপস্থিত কিছু শিক্ষকের ভূমিকাও ভালো ছিল না বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাসনের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা আর শিক্ষার্থীদের নিদারুণ কষ্টের শিকারে পরিণত করবেন না, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের দাঁড় করাবেন না। দায়িত্ব পালন না করতে পারলে সরে দাঁড়ান, তবু বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচতে দিন। অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করুন।”

পাশাপাশি ওইদিনের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বে থাকা লোকদের বাদ দিয়ে গ্রহণযোগ্য লোক নিয়ে তদন্ত কমিটি পুনর্গঠনের দাবিও জানান তিনিচ্ছি।

ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ তাসনিয়া জাহান রিয়া বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের শিক্ষার্থীদের সাথে এক ধরনের প্রতিহিংসামূলক আচরণ করছে এবং আমাদেরকে সংকটের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা প্রশাসনের এসব কাজের প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।”

মামলা প্রত্যাহার ছাড়াও মানববন্ধন থেকে ঐক্যমঞ্চের অন্যান্য দাবিগুলো বাস্তবায়নেরও দাবি জানানো হয়।

ঐক্যমঞ্চের দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা সকল মামলা প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের বিচার, প্রক্টরের জবাবদিহিতা কার্যকরকরণ, অপরাধী চালককে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা, নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা।

উপাচার্যের বাস ভবনের সামনে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অবস্থান

মানববন্ধনে শিক্ষকদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একেএম শাহনাওয়াজ, নৃবিজ্ঞানের মানস চৌধুরী ও মির্জা তাসলিমা সুলতানা, সরকার ও রাজনীতির নইম সুলতান ও শামছুল আলম সেলিম, দর্শনের আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, রায়হান রাইন, বাংলার শামীমা সুলতানা, ফার্মেসীর মাফরুহী সাত্তার, গণিতের শরীফ উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, পরিবেশ বিজ্ঞানের একেএম রাশিদুল আলম, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির ফজলুল করিম পাটোয়ারী, ইতিহাসের আনিছা পারভীন জলি প্রমুখ।

এছাড়া মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট ও জাবি সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৬ মে ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় বাসচাপায় নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র নাজমুল হাসান রানা এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছাত্র আরাফাত  হোসেন।

প্রতিবাদে ২৬ মে ও ২৭ মে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। ২৭ মে বিকালে পুলিশের লাঠিপেটায় আন্দোলনকারীরা রাস্তা ছাড়তে বাধ্য হয়। পুলিশের লাঠিপেটা, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটে সাংবাদিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ আহত হয় ১০ শিক্ষার্থী।

পরে সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে সেখানে ভাঙচুর চালায়।

রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে সব শিক্ষার্থীকে ২৮ মে রোববার সকাল দশটার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওই রাতেই আশুলিয়া থানা পুলিশ উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে থাকা ১০ ছাত্রীসহ আন্দোলনকারী ৪২ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়। পরদিন বিকালে ওই শিক্ষার্থীরা জামিনে মুক্তি পান।

এ ঘটনার সাত দিন পরে গত ৩ জুন শনিবার পুনরায় এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় আগামী ৮ জুন থেকে হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সিন্ডিকেটের আদেশে বলা হয়, মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।