শালিখা উপজেলার শতখালী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য মানুষ আসছে আতিয়ারের নার্সারি দেখতে।
আতিয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুই যুগের বেশি সময় ধরে তিনি নার্সারি করছেন। বর্তমানে তার সাত বিঘা জমিতে রয়েছে নার্সারিসহ বিভিন্ন ফল ও ফুলের বাগান। শুরু থেকেই তিনি দেশি-বিদেশি নতুন জাতের ফুল-ফলের চারা সংগ্রহ করছেন।
“এরই ধারাবাহিকতায় বছর চারেক আগে ব্রুনাই কিং নামের বিশালাকৃতির আমের এ জাতটি সংগ্রহ করি। ব্রুনাই রাজপরিবারে কর্মচারী হিসেবে আছে আমার এক ভাগিনা। সেখানে একটি গাছে পাঁচ কেজি ওজনের আম ধরে বলে খবর পেয়ে কলম সংগ্রহ করতে বলি ভাগিনাকে।”
কলম থেকে তৈরি গাছে দুই বছরের মাথায় দুই কেজি ওজনের ছয়টি আম ধরে। পরের বছর চার থেকে সাড়ে চার কেজি ওজনের ১১টি আম ধরে বলে তিনি জানান।
“শুধু সাধারণ মানুষ না, মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টার ও ঢাকা থেকে কৃষি বিভাগের বড় বড় কর্মকর্তা আমার নার্সারিতে আসেন চারা সংগ্রহ করতে। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর টেবিল পর্যন্ত আমার আম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ আম নিয়ে দেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা নানা গবেষণা করছেন।”
গত বছর তিনি প্রথমবারের মতো একটি আমের চারা এক হাজার টাকায় বিক্রি করেন বলে জানান।
তিনি বলেন, “তারপর দুই লাখ টাকা আয় করেছি। এ বছর ৫০০ চারা তৈরি করছি, যা থেকে আরও বেশি আয় হবে বলে আশা করছি।
“এ আম শুধু আকৃতিতেই বড় নয়, অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু। বিচি একদম ছোট হওয়ায় একেকটি আমে সাড়ে তিন কেজির ওপরে রস পাওয়া যায়। এছাড়া একটু দেরিতে—শ্রাবণ মাসে—এ আম পাকে বলে বাজারে দামও বেশি থাকে।”
আতিয়ারের নার্সারিতে চারা সংগ্রহ করতে আসা যশোর বিএডিসির কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নানা মাধ্যমে ব্রুনাইকিংয়ের কথা শুনে চারা কিনতে এসেছি।
“বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও স্বাবলম্বী হবে। ব্যাপকভাবে চাষ হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে।”
মাগুরা শহরের কাউন্সিল পাড়ার বাসিন্দা রবীন শরীফ তার বড়ির ছাদে ব্রুনাই কিংয়ের আমের চারা লাগিয়ে গত বছর সোয়া চার কেজি ওজনের একাধিক আম পেয়েছেন বলে জানান।
“এটা দেখে ঢাকায় বসবাসকারী আত্মীয়-স্বজন এই চারা সংগ্রহের জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছেন। তাদের জন্য আজ আবার চারা কিনতে এসেছি।”
মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ আমিনুল ইসলাম আতিয়ার রহমানের কাছ থেকে কলম নিয়ে হর্টিকালচার সেন্টারে লাগিয়েছেন।
তিনি বলেন, “নতুন গাছে গত বছর চার-পাঁচটি চার কেজি ওজনের আম ধরেছিল। এ বছরও বেশ কিছু আম ধরেছে। আমরা কলমের মাধ্যমে এ বছর কিছু চারা বানিয়েছি।
“যেভাবে এ আম দেখতে ও চারা কিনতে মানুষ হর্টিালচারে আসছে তাতে আমরা রীতিমতো অবাক। এ আমের বাণিজ্যিক চাহিদা রয়েছে। সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ আম রপ্তানিকারক দেশ হয়ে উঠবে।”