আশ্রয়কেন্দ্রে বৃদ্ধের মৃত্যু, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত

ঘূর্ণিঝড় মোরা থেকে বাঁচতে কক্সবাজারের আশ্রয়কেন্দ্রে আসার পর এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে; ঝড়ের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয়েছে জেলার অসংখ্য ঘরবাড়ি; উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2017, 02:46 AM
Updated : 30 May 2017, 02:46 AM

কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কক্সবাজার শহরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। তিনি আতঙ্কিত হয়ে মারা যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা।”

তাৎক্ষণিকভাবে কেউ তার নাম-পরিচয় বলতে পারেনি বলে জানান মেয়র রহমান।

ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতির বাতাস নিয়ে মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে জেলার কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে চট্টগ্রামের দিকে রওনা হয় ঘূর্ণিঝড়টি। সেই থেকে অসংখ্য ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর আসছে প্রতিনিয়ত।

ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন, শুধু কক্সবাজার পৌর এলাকায়ই সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। কিছু আংশিক, কিছু সম্পর্ণ। অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর আহম্মদ বলেন, “এ ইউনিয়নে দেড় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক জায়গায় গাছপালা উপড়ে গেছে।

“আশপাশে যতদূর দেখেছি তাতে কমপক্ষে ৭০ ভাগ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে। অগণিত সংখ্যক গাছপালা ভেঙে গেছে। আমার নিজের সেমিপাকা বাড়িটিরও আংশিক ভেঙে গেছে।”

এদিকে টেকনাফ উপজেলায় মোবাইল নেটওয়ার্কে বিপর্যয় ঘটেছে বলে ধারণা করছেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।

তিনি বলেন, টেকনাফের কোনো মোবাইল অপারেটরেই কারও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্কে বিপর্যয় ঘটেছে।

কক্সবাজার বিমান বন্দরে মঙ্গলবার সকাল থেকে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ১১টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল কক্সবাজার শহরে। সাড়ে ১১টার দিকে আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।

তবে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ঝড়ের আগেই সবাই আশ্রয়কেন্দ্রসহ উঁচু ভবনগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, ভোর ৬টার দিকে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে মোরা। তার আগে থেকেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে, কখনও হালকা, কখনও মাঝারি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জয় জানিয়েছেন, এ জেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখের অধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।

“তবে ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোনো ধরনের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।”

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, উপকূলীয় এলাকার দুই লক্ষাধিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খুলে দেওয়া হয়েছে জেলার ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। গঠন করা হয়েছে ৮৮টি মেডিকেল টিম। প্রস্তুত রাখা হয়েছে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির আওতায় ৪১৪টি ইউনিটের ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্টের ১৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনের নিরাপত্তার পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে খাদ্য সরবরাহেরও ব্যবস্থা।